বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ
গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় দিনেও চলছে চাকুরি স্থায়িকরণের জন্য এক দফা দাবিতে দৈনিক মুজুরী ভিত্তিক ১৩৪ জন কর্মচারীদের অবস্থান কর্মসূচি।
আন্দোলনরত কর্মচারীরা বলছেন, তাঁদের চাকরি স্থায়ীকরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের এই আন্দোলন চলবে।
অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সাথে এতো পদ সৃষ্ট হয় না। তাছাড়া চাকুরি বা নিয়োগের ব্যাপারে তাদের কোন হাত নেই। বিগত তিন নিয়োগে দৈনিক মজুরী ভিত্তিক কর্মচারীদের ১৫৪ জনের মধ্যে থেকে ১৮ জনকে চাকুরি দিয়েছে রিজেন্ট বোর্ডের সদস্যরা।
রবিবার (২১ মে) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় গিয়ে দেখা যায়, উপাচার্যের দপ্তরের সামনের কোরিডরের মেঝেতে বসে দৈনিক মজুরী ভিত্তিক কর্মচারীরা অবস্থান করছে। অনেকে হাতে “চাকুরি স্থায়িকরন করা হোক” লেখা কাগজ ধরে বসে আছেন। এসময় তারা চাকুরী স্থায়ীকরণের বিভিন্ন ধরনের শ্লোগান দেয়।
আন্দোলনরত দৈনিক মজুরী ভিত্তিক কর্মচারী রিক্তা বেগম বলেন, ছয় বছর এখানে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে আছি, শুধুই আশ্বাস শুনে আসছি। আমার স্বামী নেই। পাঁচটি সন্তান নিয়ে চলতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। উপাচার্য খন্দকার নাসির উদ্দিনের সময় টাকা দিয়ে চাকরিতে এসেছিলাম। এখন বাধ্য হয়ে আমরা এখানে বসেছি। চাকরি না হলে এখান থেকে উঠবো না।
দৈনিক মজুরী ভিত্তিক কর্মচারীরা ও অবস্থান কর্মসূচি পালনকারি মো.বাহাদুর খান বলেন, আমাদের বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু কেন তারা নিবর আমরা বুঝতে পারছি না। উপাচার্য স্যার উদ্যোগ নিলে আমাদের একটা ব্যবস্থা হতো। আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে বাঁচতে পারতাম।
তিনি আরো বলেন, সাবেক উপাচার্য প্রফেসার ড. খন্দকার নাসির উদ্দিনের সময় আমাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি চলে যাওয়ার পর উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পালন করেন অধ্যাপক ড. মো. শাহজান স্যার। তিনিও আমাদের নিয়ে কোন কাজ করেননি। অথচ আমাদের যখন চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয় তখন বলা হয়েছে অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের নিয়োগ স্থায়ি করা হবে।
সাত-আট বছর আমাদের আশা দিয়ে রেখেছে। বর্তমানে উপাচার্য একিউএম মাহবুব আসার প্রথম দিকে আমাদের নিয়ে বেশ উদ্যোগ ছিল। তার সময়ে তিনটি নিয়োাগ গেল। তাতে ১৮ জনকে চাকরি দিয়েছেন।
নিপা অধিকারী বলেন, এখন তো আমাদের সামনে আর কোন পথ নেই। পরিবার পরিজন নিয়ে, খেয়ে না খেয়ে জীবন যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবী আমাদের চাকুরী স্থায়ী করা হোক। যাতে পরিবার পরিজন নিয়ে আমরাও বাঁচতে পারি।
অন্যান্য আন্দোলনরত কর্মচারীরা জানান, আমাদের বার বার আন্দোলনের পর ২ সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ পর্যায় ব্যক্তিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি একটা নীতিমালা সুপারিশ করে। এর পরিপেক্ষিতে ৫ মে ২০২৩ সালে ২৯ তম রিজেন্ট বোর্ডেও আমাদের নিয়ে একটি নীতিমালা প্রনয়নের পর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি বলেও ওই কর্মচারীরা জানান।
শনিবার (২০মে) গুচ্ছ ভর্তি পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওই পরীক্ষায় গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র থাকায় তারা আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত রাখে। গতকাল রবিবার সকাল ১০ টা থেকে তারা পুনরায় অবস্থান কর্মসূচি আন্দোলন শুরু করেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দলিলুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সাথে এত পদের সৃষ্টি হয়না। তাছাড়া ১৫২ জনের মধ্যে ১৮ জনের চাকরি হয়েছে। নিয়ম নীতি মেনেই নিয়োগ দেন রিজেন্ট বোর্ড। তিনি আরো বলেন, জাতীয় ইস্যু ২০ মে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে উপাচার্যের দপ্তরে সভা চলছিল। ওই সময় তারা উপাচার্যের দপ্তরের প্রধান ফটকে তালা বন্ধ করে দিয়ে ঠিক কাজ করেনি। তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে সেটা আমাদের পূর্বে নোটিশ দেওয়া উচিত ছিলো। তবে, আন্দোলনরত কর্মচারীরা জানিয়েছেন,তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে স্মারকলিপি দিয়েই আনোদালন শুরু করেছেন।
উল্লেখ, বুধবার (১৮ মে) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দপ্তরের সামনের প্রধান ফটক তালাবদ্ধ করে চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীরা এ কর্মসূচি শুরু করেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য একিউএম মাহবুব, প্রক্টর মো. কামরুজ্জামান, কোষাধ্যক্ষ মোবারক হোসেন ও রেজিস্ট্রার দলিলুর রহমান অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। দুপুর পৌনে ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতির সদস্যরা কলপসিবল গেট ভেঙ্গে উপাচার্যসহ কর্মকর্তাদের মুক্ত করে।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply