কালের খবরঃ
সড়ক ও বিদ্যুৎ বিভাগের সমন্বয়হীনতায় গোপালগঞ্জে আঞ্চলিক সড়কের মাঝে থাকা বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণ না করেই রাস্তা নির্মাণ করে চলছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। রাস্তার মাঝখানে খুঁটি রেখে সড়ক প্রশস্ত ও উন্নতিকরনে কাজের মান নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে জনমনে। গোপালগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ সড়কের নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করলেও বিদ্যুৎ বিভাগ খুঁটি সরানোতে উদাসিনতা দেখাচ্ছে বলে সড়ক বিভাগ দাবী করছে। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পেলেই খুঁটি উত্তোলন বা সরানোর কাজ শুরু করা হবে।ফলে নির্মাণাধীন সড়কের খুঁটি অপসারণ নিয়ে দুই বিভাগের মধ্যে চলছে রশি টানাটানি।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রায় ছয়শত কোটি টাকা ব্যয়ে টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ-ঘোনাপাড়া পর্যন্ত ছয়টি প্যাকেজে ৪৪ কিলোমিটার দৈঘ্য ও ১৮ ফুট প্রশস্ত সড়ককে আঞ্চলিক মহাসড়কে উন্নতি করে ১৮ ফুট থেকে ৩৪ ফুট করার কাজ চলমান রয়েছে।এই সড়কের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোনাপাড়া থেকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মোড় পর্যন্ত এবং সেখান থেকে হরিদাসপুর পর্যন্ত দুইজন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ করছে। এই এলাকা জেলা শহর ও ওয়েষ্ট জোন পাওয়ার ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) আওতাভূক্ত। এই অংশে ৫ ও ৬ নম্বর প্যাকেজের বর্ধিত অংশের মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ (ওজোপাডিকোর) বিভাগের প্রায় দুইশতাধিক বৈদ্যুতিক খুঁটি। রাস্তা প্রশস্ত কাজ করতে গিয়ে এসব খুঁটি প্রায় রাস্তার মাঝ খানে চলে এসেছে। এসব খুঁটি অপসারন না করেই চলছে সড়ক প্রশস্ত ও উন্নতিকরন কাজ। এতে রাস্তা প্রশস্ত হলেও সুফল মিলবেনা বলে জানিয়েছে চালক ও এলাকাবাসি।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ আরো জানিয়েছে, বিদ্যুৎ বিভাগকে (ওজোপাডিকো) খুঁটি সরানোর জন্য চিঠি দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত তারা খুঁটি সরানোর কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ (ওজোপাডিকো) জানিয়েছে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পেলেই তারা খুঁটি সরানোর কাজ করবে। সওজ আর বিদ্যুৎ বিভাগের এই রশি টানাটানিতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা নিয়ে আশংকা দেখা দিয়েছে।ইতোমধ্যে নির্মাণ কাজের ১ বছর পেরিয়ে গেলেও আগামী ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার তাড়া রয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগের। কিন্তু কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৪০ শতাংশ।
এই সড়কে চলাচলকারী যানবাহন চালক মোঃ আরিফ মোল্লা বলেন, রাস্তার মাঝে পিলার থাকলে দুর্ঘটনা আরো বাড়বে। তাই বিদ্যুতের খুঁটি সরিয়ে রাস্তা তৈরী না করলে প্রতিদিনই এক্সিডেন্ট হবে।
প্রাইভেট কার চালক মোঃ ইসমাইল হোসেন বলেন, রাস্তা বড় করে কোন লাভ হবে না। রাস্তার মাঝে এভাবে পিলার থাকলে তাতে স্বাচ্ছন্দে গাড়ী চালানো যাবে না। বরং যানজট বেড়ে যাবে। ভালো হয় পিলার গুলো তুলে সাইডে দেয়া। তানাহলে দুর্ঘটনাও বাড়বে।
গোপালগঞ্জ শহরের মোঃ আনিসুল ইসলাম বলেন, রাস্তা ঠিক করার আগে পিলারগুলো তুলে পাশে দেয়া উচিৎ ছিল। রাস্তার কাজ শেষে যদি আবার পিলার তুলতে হয় তাহলে রাস্তা নষ্ট হবে আবার অতিরিক্ত ব্যয় হবে।
নির্মাণ কাজের রোলার চালক এবাদদ হোসেন ও সুলতান কাজী বলেন, রাস্তার মাঝে পিলার থাকায় বালু কম্প্যাক্ট করতে সমস্যা হচ্ছে। পিলারের আশপাশে ঠিকমতো বালু বসছেনা। পরবর্তিতে মাটি বসে গিয়ে রাস্তা ডেবে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
টিকাদার কামরুল ইসলাম বলেন, বৈদ্যুতিক খুঁটি না সরিয়ে কাজ করায় মাটি ঠিকমত বসানো যাচ্ছে না। কাজে সমস্যা হচ্ছে। পরে যদি আবার খুঁটি উঠিয়ে কাজ করা হয় তাহলে ঠিকমত বালু কমপেকশন হবেনা। তাই কর্তৃপক্ষকে বিদ্যুতের খুঁটি দ্রুত সরানোর দাবী জানাচ্ছি।
প্রজেক্ট ম্যনেজার বিভূতি ভূষন ভৌমিক বলেন, বৈদ্যুতিক খুঁটি না সরিয়ে কাজ করায় মাটি ঠিকমত বসানো যাচ্ছে না। কাজের মান ভালো হচ্ছে না এবং সময় মতো কাজ শেষ করা কষ্ট হবে এবং অর্থনৈতিক ভাবেও ক্ষতির সম্মুখিন হতে হবে।
গোপালগঞ্জ ওজোপাডিকো-র নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের নিয়মানুযায়ী খুঁটি সরোনো বাবদ প্রাক্কলিত মূল্য হাতে পেলেই সরানোর কাজ শুরু করা হবে।গোপালগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জাহিদ হোসেন বলেন, সদর উপজেলার হরিদাসপুর এলাকা থেকে ঘোনাপাড়া পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিভাগকে তাদের প্রায় ২শ” বৈদ্যুতিক খুঁটি সরিয়ে নেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হলেও তারা কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। যে কারেন কাজের অগ্রগতি কমে যাচ্ছে । আশাকরি দ্রুত পিলার সরিয়ে কাজে সহায়তা করবেন বিদ্যুৎ বিভাগ।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply