কালের খবরঃ
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর সোমবার (১৬ জানুয়ারী) উদ্বোধন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে ৫০টি মডেল মসজিদের উদ্বোধন করেন। এর মধ্যে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা মডেল মসজিদ একটি। গোপালগঞ্জ শহরের ফকিরকান্দিতে এই দৃষ্টিনন্দন আধুনিক স্থাপনায় মসজিদটি নির্মিত হয়। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পর যোহরের নামাজ আদায় করেছেন বিভিন্ন শ্রেনী পেশার পাঁচশতাধিক মুসল্লি। মসজিদ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি (পদাধিকার বলে) গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মহসিন উদ্দিন। তিনি ইতো মধ্যে আবু ওবায়দা নামে একজনকে ইমাম, মোঃ ইমরান হোসেনকে মোয়াজ্জিম , মোঃ বদরুল আলম ও মোঃ আব্দুল আজিম খানকে খাদিম হিসেবে প্রাথমিক ভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। এই চারব্যক্তি মসজিদ দেখভাল ও নামাজ পড়ানোর কাজে নিয়োজিত থাকবেন। পরবর্তিতে মডেল মসজিদের কাঠামো অনুযায়ী লোকবল নিয়োগ ও পরিচালিত হবে বলে জানিয়েছে বর্তমান সভাপতি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মহসিন উদ্দিন।এই মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি ওই এলাকার দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে। এলাকার সৌন্দর্য বর্ধনসহ এখানে নামাজ আদায় ও ধর্মচর্চা করতে মানুষের মধ্যে আগ্রহ দেখা দিয়েছে।
এই সমজিদে নারী ও পুরুষদের পৃথক ওজু ও নামাজ আদায়ের সুবিধা রয়েছে। এখানে লাইব্রেরী, গবেষণা ও দীনি দাওয়াত কার্যক্রম, পবিত্র কুরআন হেফজ, শিশু শিক্ষা, অতিথিশালা, বিদেশী পর্যটকদের আবাসন, মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া হজ্জযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণ, ইমামদের প্রশিক্ষণ ইত্যাদি ব্যবস্থা থাকছে আধুনিক এই ইসলামি স্থাপনায়। ইমাম-মুয়াজ্জিনের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিস রয়েছে এখানে।
গোপালগঞ্জ ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্রে জানাগেছে, বাংলাদেশে মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ইসলাম ধর্মীয় ইবাদত ও শিক্ষার অনুশীলনের আধুনিক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মানের একটি প্রকল্প। এই প্রকল্পের আওতায় গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার আধুনিক, চিত্তাকর্ষক নিদর্শন ও উন্নত সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত মসজিদ ও ইসলামী সংস্কৃতি কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে । গোপালগঞ্জ গণপূর্ত অধিদপ্তর মসজিদটির নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে।
জেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক এওএম মাসউদুল হক জানিয়েছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬০টি উন্নত মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। সেই আলোকে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ৩ তলা বিশিষ্ট মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে।গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ১ হাজার ৬৮০ দশমিক ১৪ বর্গমিটার আয়তনের ‘বি’ ক্যাটারির মসজিদ। এই মডেল মসজিদে একসঙ্গে ৯০০ মুসল্লির নামাজ আদায় করতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগকে আমি আন্তরের অন্তস্থল থেকে শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
গোপালগঞ্জ গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী (দায়িত্ব প্রাপ্ত) কাশেফ আমিনুর রহমান ও উপসহকারী প্রকৌশলী রাজিব আহমেদ তরফদার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ১২ কোটি ৫৭ লাখ ৫৬ হাজার টাকা ব্যয়ে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সামন্য কিছু কাজ বাকী রয়েছে সেগুলো আগামী দুই এক মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে। সোমবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আধুনিক ইসলামী স্থাপত্য শিল্পের আদলে নির্মিত এই মসজিদের উদ্বোধন করেছেন। এছাড়া জেলায় আরো ৫টি মডেল মসজিদ নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে । সেগুলোও সময় অনুযায়ী শেষ হবে।
গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও মসজিদ এলাকার বাসিন্দা শেখ মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন,ইসলামিক ফাউন্ডেশন অ্যাক্ট, ১৯৭৫-এর বাস্তবায়ন এবং দেশব্যাপী শক্তিশালী ইসলামি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলা। সারাদেশে ইসলামি ভ্রাতৃত্ব ও প্রকৃত মূল্যবোধের প্রচার ও দীক্ষাদান চালু করা। সন্ত্রাস ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করা। সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা। পুরুষ-নারী মুসল্লিদের জন্য নামাজ, ধর্মীয় শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও দীনি দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভৌত সুবিধাদি সৃষ্টি করা। ইসলামিক জ্ঞান ও সংস্কৃতি সম্প্রসারণের মাধ্যমে ইসলামি মূল্যবোধের পরিচর্যা ও প্রসার করা এবং সততা ও ন্যায়বিচারের প্রতি মানুষের আনুগত্য সমর্থন সৃষ্টি করাই প্রকল্পের মূখ্য উদ্দেশ্য।এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।
গোপালগঞ্জ শহরের ফকিরকান্দি এলাকার বাসিন্দা কাজী জাহিদ, সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের ইছাখালি গ্রামের বাসিন্দা বদরুল আমিন খান, বঙ্গবন্ধু কলেজের সহকারী অধ্যাপক প্রফেসর মহববত আলী,গোপালগঞ্জ মুসলিম এতিম খানার শিক্ষক রেজাউল করিমের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, মডেল মসজিদ ও ইসলামী সংস্কৃতি কেন্দ্র আমাদের এলাকার সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। দৃষ্টিনন্দন এই স্থাপনা আমাদের কাছে খুব ভাল লাগছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মসজিদটি আমাদের এলাকায় করে দিয়েছেন। এইজন্য তাকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। এখানে নামাজ আদায় করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।
মসজিদের ইমাম আবু ওবায়দা বলেন, এই মসজিদটি আমাদের এলাকার অভিজাত স্থাপনা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। উদ্বোধনের পর পাঁচশতাধিক মুসল্লি নামাজ আদায় করেছেন। এই মসজিদে নয়শতমানুষ নামাজ আদায় করতে পারবেন। এই মসজিদের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হন নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লিগণ। আমার কাছে মসজিদটি প্রিয় স্থানে পরিনত হয়েছে। এখানে আজ নামাজ আদায় শুরু হয়েছে। মুসল্লিদের ধর্ম চর্চায় মসজিদটি মুখরিত হয়ে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের এলাকায় এমন সুন্দর মসজিদ উপহার দেওয়ার জন্য আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। নামাজ আদায় করার পর প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দোয়া মোনাজাত করা হয়েছে।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply