বশেমুরবিপ্রবির প্রতিনিধিঃ
গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) অভ্যন্তরে মাষ্টারপ্ল্যান উপেক্ষা করে এবং রিজেন্ট বোর্ডের অনুমতি না নিয়ে হাইটেক পার্ক নির্মাণের বিরোধিতা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের দাবি, ৫৫ একরে মাষ্টারপ্ল্যানকে উপেক্ষা করে এই পার্ক নির্মাণ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এতে একদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নষ্ট হবে অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগবে।
২৯ আগস্ট (সোমবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের মাষ্টারপ্ল্যান অনুযায়ী অডিটোরিয়ামের স্থানে হাইটেক পার্ক নির্মাণের জন্য জায়গা অধিগ্রহন করলে বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিবাদী আওয়াজ শুরু হয়।
৩০ আগস্ট(মঙ্গলবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এ কিউ এম মাহবুব অডিটোরিয়ামের স্থানে হাইটেক পার্ক নির্মাণের জন্য ৪ একর জায়গা ঠিকাদার রানা ধর’কে বুঝিয়ে দেওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিবাদের জোয়ার বইতে থাকে। এসময় তারা বিশ্ববিদ্যালয় অভ্যন্তরীন হাইটেক পার্কের বিরোধিতা করে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে শতাধিক পোস্ট শেয়ার করেন।
শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়তন মাত্র ৫৫ একর। এই ৫৫ একরে আয়তনের তুলনায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা অধিক। এবং শিক্ষার্থীদের তুলনায় পর্যাপ্ত পরিমাণ শ্রেণীকক্ষের অভাব। এমনি পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য নেই কোনো অডিটোরিয়াম, ক্যাফেটেরিয়া ভবন থাকলেও হয়নি চালু, নেই টিএসসি।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাষ্টারপ্ল্যানে অডিটোরিয়ামের স্থানে হাইটেক পার্ক নির্মাণের বিরোধিতাকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা হাইটেক পার্ক চাই তবে সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাষ্টারপ্ল্যান উপেক্ষা করে ৫৫একরের এক ইঞ্চি জায়গাও ছাড় দেওয়া হবেনা। যদি হাইটেক পার্ক নির্মাণ করতে হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে নতুন করে জায়গা অধিগ্রহণ করে পার্ক নির্মাণ করা হউক।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী উজ্জ্বল মন্ডল কৃষ্ণময় বলেন, হাইটেক পার্ক আমাদের উত্তম মননশীল চেতনা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা প্রদান করবে তবে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হারাতে চাইনা। বারবার আমরা স্থানীয় লোকজনের হাতে মার খেয়ে আসছি, এতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তেমন কোনো টনক নড়েনি৷ তিনি বলেন, এখন যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে পার্ক নির্মাণ করা হয় তাহলে স্থানীয় লোকজনের আনাগোনা বৃদ্ধি পাবে৷ এতে করে পূর্বের ন্যায় আমরা এলাবাসী দ্বারা আক্রমণের স্বীকার হবো।
হাইটেক পার্ক নির্মাণের বিরোধিতা করার কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৫৫একর আমাদের জন্য পর্যাপ্ত না। ৫৫একরের মাস্টারপ্ল্যানের কাজ শেষ না করেই নতুন করে একটি প্রকল্প কিভাবে হাতে নেওয়া হয়! তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টি নানামুখী জটিলতায় ভুগছে, এখানে কেন্দ্রীয় টিএসসি নির্মাণের খোঁজ নেই, অডিটোরিয়াম নির্মাণের খোঁজ নেই, জিমনেসিয়াম নির্মাণের খোঁজ নেই, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির বহুতল ভবন নির্মাণের খোঁজ খবর নেই, আবাসিক হল গুলোতে যথাযথভাবে ডাইনিয়য়ের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের কোন হদিস নেই কিন্তু শিক্ষার্থীদের জন্য অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে প্রশাসন মেতে উঠেছে।
এবিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম বলেন, ৫৫একরে মাষ্টারপ্ল্যানের কাজ শেষ না করে হাইটেক পার্ক নির্মাণ করা যাবেনা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রথমে মাষ্টারপ্ল্যানের কাজ শেষ করতে হবে, তারপর যদি জায়গা থাকে তাহলে নতুন কোনো প্রকল্প হাতে নেওয়া যাবে৷ মাষ্টারপ্ল্যানের বিরোধিতা করে একটি ভবনের স্থানে অন্যকোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবেনা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে যদি হাইটেক পার্ক নির্মাণ করতে হয় তাহলে নতুন করে জায়গা অধিগ্রহণ করে পার্ক নির্মাণ করতে হবে৷ তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের ৫৫একর থেকে অপ্রয়োজনীয় হাইটেক পার্ক নির্মাণের জন্য ৪একর জায়গা ত্যাগ করতে পারবনা।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এ কিউ এম মাহবুবের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply