কালের খবরঃ
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের আমীর শাইখুল হাদীস আল্লামা মামুনুল হক বলেছেন, ভারতীয় সংবিধানের মূলনীতির ভিত্তিতে প্রণীত ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী ৭২-এর সংবিধান বাংলার মাটিতে চলতে দেয়া হবে না। আগামীর বাংলাদেশ গড়ে উঠবার জন্য ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের সনদকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি প্রদান করে আইনের ভিত্তি তৈরি করেই ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।
আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় স্থানীয় পৌরপার্কের উন্মুক্ত মঞ্চে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ গোপালগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা জুলুম ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ করলাম কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ সেই মুক্তিযুদ্ধের সুফল তথা বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে পারলো না। বরং আমাদের পাশ্ববর্তী একটি রাষ্ট্র আমাদের দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে ১৯৭২ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ফসলকে ছিনতাই করে মানুষের ইচ্ছা ও অধিপ্রায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে ৭২-এর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী একটি ভারতীয় আধিপত্যবাদের সংবিধান তৈরি করে। এই সংবিধানের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের মানুষের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা করা হয়েছে।
খেলাফত মজলিশের আমীর বলেন, কলকাতার দাদা বাবুদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে একটি মুসলিম জাতির সত্ত্বার জন্য আমাদের পূর্বপুরুষরা লড়াই করেছে। এ লড়াইয়ের মধ্যদিয়ে ১৯৪৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান নামে মুসলিম জাতি সত্ত্বার এক জনপদের জন্ম হয়েছে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে লাখো মানুষের জীবন, রক্ত ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলার মানুষ পিন্ডির আধিপত্যবাদ থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছে।
আল্লামা মামুনুল হক বলেন, আগামী গোপালগঞ্জ হবে ইসলামের গোপালগঞ্জ, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর গোপালগঞ্জ। আমি আজ সেই সকল বীর শহীদদের স্মরণ করছি, যারা পিলখানা, শাপলা চত্বর ও ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবে শহীদ হয়েছেন, যাদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে আজ বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনভাবে বসবাস করার সুযোগ পাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষের কাঁধে চেপে বসা ফ্যাসিবাদী শক্তি বিনাশ হয়েছে। এখন বাংলাদেশের মানুষ আগামী দিনে ইনসাফ ভিত্তিক একটি সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখছে। ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, এদেশের মানুষ অনেক সংগ্রাম করেছে, অনেক লড়াই করেছে, অনেক আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মাধ্যমে আজ বাংলাদেশ এই পর্যায়ে উপনীত হয়েছে।
বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদ উৎখাত হয়েছে, নতুন কোন ফ্যাসিবাদ বাংলার মাটিতে আর শিকড় গেড়ে বসতে পারবে না। এদেশের মানুষ বহুবার প্রতারিত হয়েছে। দেশের মানুষের মুক্তির সংগ্রামের ইতিহাস বারবার ছিনতাই করা হয়েছে। এবারের বিজয় যে অপশক্তি ছিনতাই করতে আসবে, তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে।
আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জুলাই সনদের ভিত্তিতে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে। কিন্তু সেই উচ্চ কক্ষ কীভাবে গঠিত হবে, তা নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল একমতে আসতে পারেনি। আমাদের জন্য এটি অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়। জুলাই বিপ্লবে যাদের সন্তানরা রক্ত দিয়েছিলেন, যাদের ভাইয়ের রক্ত দিয়ে ৫ আগস্ট নতুন করে বাংলাদেশকে আবার স্বাধীনতার স্বাদ দিয়েছেন, সেই সহস্রাধিক রক্তদাতা শহীদ শাহাদাৎ বরণকারী বীর শহীদদের আত্মত্যাগ, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই, জুলাই বিপ্লবের অংশীজনরা নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক বিভক্তি ও বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন। বাংলাদেশের মানুষ এই বিরোধ দেখতে চায় না। আমরা চাই, জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামীর বাংলাদেশ গড়ে উঠুক। ২০২৪ সাল হবে আগামীর বাংলাদেশ গড়ার প্রধান মাইলফলক।
২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে তৌহিদী জনতা বুকের রক্ত দিয়ে বিপ্লবের যে ভিত্তি গড়ে তুলেছিল, তার উপর দাঁড়িয়ে ২০২৪ সালের বিপ্লব গড়ে উঠবে। শাপলা চত্বরের বীর শহীদদের যদি অস্বীকার করা হয়, তাহলে এই দেশ ও জাতি বিশ্বাসঘাতক জাতি হিসেবে ইতিহাসে আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। তাই ২০০৯ সালের পিলখানা ট্রাজেডিতে শাহাদাৎ বরণকারী বীর শহীদ, শাপলা চত্বরের বীর শহীদ, ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের বীর শহীদদের যথাযথভাবে রাষ্ট্রীয় সম্মান দিতে হবে।
যে উচ্চ কক্ষ গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, সেই উচ্চ কক্ষ পিআর পদ্ধতিতে ভোটাধিকারের সংখ্যানুপাতিক হারে বাস্তবায়ন করতে হবে। এটিকে যেন বেকারদের পুনর্বাসনের উচ্চ কক্ষ না করা হয়। তাহলে জনগণের ট্যাক্সের টাকায় সেখানে কাউকে বসতে দেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, এখনো বাংলাদেশে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। নির্বাচন ঘনিয়ে এসেছে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। আমরা প্রশাসনকে গোটা বাংলাদেশে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টি করার আহবান জানাচ্ছি। বাংলাদেশকে একটি বৈষম্যহীন ইনসাফ ভিত্তিক একটি দেশ গড়তে চাই।
গোপালগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা ফারুক হাসান নদভী সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে কেন্দ্রীয় মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দীন আহমাদ, মাওলানা আতাউল্লাহ আমান, মুফতি শরাফত হোসেন, মাওলানা আজিজুর রহমান হেলাল, মাওলানা নাসির উদ্দিন আহমাদ, জেলা জামায়াতের রেজাউল করিম, সাধারণ সম্পাদক আল মাসুদ খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION