কালের খবরঃ
গোপালগঞ্জ পৌরসভার কাড়ারগাতী এলাকায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এখানে ওই গ্রামের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করে। তবে, মাত্র ৩শ’ মিটার রাস্তা নির্মাণের অভাবে, স্কুলে যেতে তাদের প্রায় আড়াই কিলোমিটার পথ ঘুরতে হয়। প্রতিদিনের যাতায়াতে বিদ্যালয়গামী কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা ব্যাপক দুর্ভোগে পড়ছেন। বিশেষ করে, ২০৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭৬ জনকে কাঁদা-পানি, কোমড় সমান জলাবদ্ধতা ও কাঁদাযুক্ত রাস্তায় যেতে হয়। অনেকে আবার নৌকায় পারাপার করা হয়ে থাকে।
গোপালগঞ্জ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ৯৬ নম্বর কাড়ারগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এর মধ্যে ৭৬ জন শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন কাঁদা-পানি মাড়িয়ে বিদ্যালয়ে যেতে বাধ্য হয়। অনেক সময় অভিভাবকরা তাদের কোলে বা ঘাড়ে তুলে, আবার কখনো খালি পায়ে পানিতে চলতে চলতে বিদ্যালয়ে পৌঁছান। জলাবদ্ধতা বেশি হলে, শিক্ষার্থীরা নৌকায় করে পারাপার হতে বাধ্য হন।
বিদ্যালয়ের সামনে একটি রাস্তা রয়েছে, তবে সরকারের বাড়ি থেকে পোদ্দার বাড়ি পর্যন্ত ৩০০ মিটার রাস্তা নির্মাণ না হওয়ায় এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন।
কাড়ারগাতী গ্রামের শিক্ষক পবিত্র কুমার বিশ্বাস বলেন, “শিক্ষার প্রসারে এই রাস্তাটি নির্মাণ করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষ রাস্তা না করায় ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে যায়। অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। অনেক সময় শিক্ষার্থীরা পা ফসকে পড়ে বই খাতা নষ্ট করে ফেলে।”
তিনি আরও বলেন, “বিকল্প একটি রাস্তা আছে, তবে সেটি দিয়ে যেতে শিক্ষার্থীদের প্রায় আড়াই কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হয়। সেই রাস্তায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক রয়েছে, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি সৃষ্টি করে। তাই এই ৩০০ মিটার রাস্তার নির্মাণ হলে শিক্ষার্থীরা এবং এলাকাবাসী সহজেই চলাচল করতে পারবেন।”
এছাড়া, একই গ্রামের ব্যবসায়ী রমেশ মজুমদার, শ্যামল মজুমদার, রঞ্জিত বিশ্বাসসহ বেশ কয়েকজন জানান, “বর্ষাকালে এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের জন্য একটি কঠিন সময়। এখানে প্রায় আড়াই হাজার মানুষের বসবাস। তাদের চলাচলের জন্য এই রাস্তাটি অপরিহার্য, তবে অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি পৌর কর্তৃপক্ষ।
কাড়ারগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী বৃষ্টি কির্ত্তনীয়া বলেন, শুকনা মৌসুমে আমরা জমির আইল দিয়ে হেঁটে স্কুলে যাই, কিন্তু বর্ষাকালে পানিতে জমির আইল তলিয়ে যায়। তখন আমরা হাঁটু বা কোমড় পানি ঝাপিয়ে স্কুলে যাই। রাস্তা না থাকায় প্রায় আড়াই কিলোমিটার পথ ঘুরে স্কুলে যেতে খুব কষ্ট হয়।
একই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাত্রী মজুমদার, স্বর্ণালী বিশ্বাস, চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী পলক বিশ্বাস, প্রাপ্তি বিশ্বাস, অর্চিতা পোদ্দারসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীরা বলেন, রাস্তার জন্য আমাদের ঠিকমতো স্কুলে যাওয়া হয় না। বৃষ্টির হলে সেদিন আর যাওয়া হয় না। পানি কাঁদা মাড়িয়ে স্কুলে যেতে খুব কষ্ট হয়। তাই আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, আমাদের রাস্তা যেন ঠিক করে দেয়া হয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হিরু কামরুন্নাহার বলেন, কাড়ারগাতী গ্রামের শিক্ষার্থীরা এই বিদ্যালয়ের প্রাণ। বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার পথে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, যা বর্ষা মৌসুমে তাদের জন্য আরো বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এই সমস্যা উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে একটি লিখিত আবেদন করা হয়েছে। তাই আমি মনে করি, রাস্তাটি নির্মাণ করা অত্যন্ত জরুরি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোছাঃ জ্যোৎস্না খাতুন বলেন, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তিনি ইতিমধ্যেই এই সমস্যাটি গুরুত্বসহকারে দেখছেন। আপাতত যাতে যাতায়াত সহজ করা যায় সে বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আর স্থায়ী ভাবে রাস্তার জন্য পৌর কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রাস্তাটি নির্মাণ হলে, এলাকার জনদুর্ভোগ দূর হবে এবং শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়ার সমস্যা সমাধান হবে।
এ ব্যাপারে গোপালগঞ্জ পৌর সভার নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, যে স্থানে রাস্তা নির্মাণ করার দাবী করা হচ্ছে সেখানে জমির মালিকরা জায়গা দিতে চাচ্ছেন না। তাই বিলম্ব হচ্ছে। জায়গার বিষয়টি সমাধান হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে রাস্তা তৈরীর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION