
কালের খবরঃ
জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করলো প্রশাসন। গত (৩০ এপ্রিল) গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার একটি গুরুত্বপূর্ন গ্রামীন সড়ক ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায়।শৈলদাহ নদীর চিতলিয়ায় নদীর পাড় ভাঙ্গনের ফলে ওই এলাকার অন্তঃত ১০ গ্রামের হাজার হাজার মানুষের সড়ক পথে যাতায়াত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বিষয়টি নজরে আসে প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের। জনগনের ভোগান্তীর কথা চিন্তা করে যৌথ উদ্যোগে মাত্র এক সপ্তাহের মাথায় জিওব্যাগ ফেলে প্রতিরক্ষা কাজ শুরু করেছে গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড। গতকাল মঙ্গলবার(৬ মে) বিকেলে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মঈনুল হক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী জাকারিয়া ফেরদৌস উপস্থিত থেকে জিওব্যাগ ড্যাম্পিং কাজের উদ্বোধন করেন।প্রথম দিনে ১৭৫ কেজি ওজনের ৯৪টি ব্যাগ ভাঙ্গন কবলিত স্থানে ফেলা হয়।আজ বুধবার সকাল থেকে পুরোদমে কাজ শুরু করা হয়।
এসময় টুঙ্গিপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মোঃ মারুফ দস্তগীর, পাউবো উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ শাহিন আলম, সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন মুন্না, গোপালগঞ্জ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি এস এম নজরুল ইসলাম, কালের কন্ঠের সাংবাদিক প্রসূন মন্ডলসহ গ্রামের গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানাগেছে, টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমরিয়া ইউনিয়নের ডুমরিয়া-সড়াবাড়ি সড়কের চিতলিয়া নামক স্থানে শৈলদহ নদীর পাড় ভাঙ্গন দেখা দেয়। ভাঙ্গনে এলজিইডির তৈরী ৫০ মিটার কার্পেটিং রাস্তা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যায়।দুইপাশে আরো প্রায় ২৫ মিটার রাস্তায় ফাটল দেখা দিয়েছে।রাস্তাটি ভেঙ্গে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় ওই এলাকার অন্তঃত ১০টি গ্রামের ২০/২৫ হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েন। তাদের প্রায় ১০কিলোমিটর পথ ঘুরে সড়ক পথে উপজেলা সদরে যেতে হয়।এঘটনার পর ৩ এপ্রিল প্রথমে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পানি উন্নয়ন বোর্ড ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।পরে ৫ এপ্রিল গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামবাসীদের অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ সাভাবিক করার আশ্বাস দেন। তারই প্রেক্ষিতে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে বালুভর্তি জিওব্যাগ ডাম্পিং করে অস্থায়ী প্রতিরক্ষা কাজ শুরু করেছেন।
চিতলিয়া গ্রামের বাসিন্দা ছানাউল্লাহ তালুকদার বলেন, আমরা বিশ্বাসই করতে পারছিনা যে এত দ্রুত ভাঙ্গন রোধে কাজ হবে।এই রাস্তা দিয়ে প্রায় ২৫/৩০ টি গ্রামের মানুষের আসা যাওয়া করে। রাস্তাটি ভেঙ্গে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল।কৃষকরা ধান নিয়ে যেতে পারছিল না।পানি উন্নয়ন বোর্ড জনগনের সদস্যা চিন্তা করে দ্রুত যে কাজটি শুরু করেছে তাতে আমরা খুবই খুশী।
একই এলাকার বাসিন্দা গোলাম কিবরিয়া সাগর,শামীম মোল্লা, পরিমল বাকচি সহ বেশ কয়েজনের সাথে কথা হলে তারা বলেন, ভাঙ্গনের পর প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড দ্রুত যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তাতে আমরা খুশী।ইতোপূর্বে এত দ্রুত কোন কাজ আমরা দেখিনি।আমরা চাই রাস্তাটি যেন টেকসই হয়।

ভাঙ্গনের ফলে একটি পরিবারের বসতঘর ভেঙ্গে যায়। এই পরিবারকে গৃহীনি লতা বেগম বলেন, ভাঙ্গনের পর ইউএনও স্যার এসেছিলেন।তিনি আমাকে একটি নতুন টিনের ঘর নির্মাণ করে দেয়ার কথা বলেছিল। মাত্র তিন দিনের মাথায় আমার ঘরটি পুরোদমে নির্মাণ করে দিয়েছেন।ঘরটি না পেলে কোথায় যে আশ্রয় নিতাম তার কোন ঠিক ছিলনা। আমি নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করি ইউএনও স্যার যেন দীর্ঘজীবী হন।
গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৗশলী জাকারিয়া ফেরদৌস বলেন, শৈলদাহ নদীর চিতলীয়ায় যে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে তাতে বেশ ক্ষতি হয়েছে। এই ভাঙ্গন যদি অব্যাহত থাকে তাহলে অনেক বাড়িঘর ভেঙ্গে যাবে। নতুন করে যাতে জনগনের ক্ষতি না হয় সেজন্য দ্রুত বালুর জিওব্যাগ ফেলে গ্রামটিকে সুরক্ষা করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ শুরু করেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিরক্ষা তৈরী করে গ্রামটিকে ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার,মোঃ মঈনুল হক বলেন, জনগনের অসুবিধার কথা চিন্তা করে জেলা প্রশাসকের সহযোগীতায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে যোগাযোগ করে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে নদীর পাড় রক্ষায় কাজ শুরু করা হয়েছে।কাজটি আমার নজরদারিতে থাকবে যাতে দ্রুত সম্পন্ন করা হয়।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION