মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:০৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
দাবি আদায়ে শিক্ষকদের ক্লাস বর্জন, সহকর্মীদের হামলার প্রতিবাদ গোপালগঞ্জে বিশ্ব মান দিবস উদযাপিত গোপালগঞ্জে পারিবারিক কলহে গৃহবধু নিহত। সৎ ছেলেকে আটক আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে গোপালগঞ্জে র্যা লী ও মহড়া গোপালগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় কৃষক নিহত গোপালগঞ্জে গাড়ি চাপায় অজ্ঞাত নারী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু ৫ দফা দাবিতে গোপালগঞ্জে ইসলামী সমমনা দলগুলোর স্মারকলিপি প্রদান টুঙ্গিপাড়ায় বাসের ধাক্কায় স্কুলছাত্রীর মৃত্যু, সড়ক অবরোধ গোপালগঞ্জেও শুরু হয়েছে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন কর্মসূচী তারুণ্যের উৎসব উদযাপন উপলক্ষে গোপালগঞ্জে ফুটবল প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত

পক্ষাঘাতগ্রস্ত বাবার ওষুধ কিনতে দিশেহারা জুঁই ও শংকরী। পান্তা আর শাকসবজি একমাত্র খাবার

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ২.৫৮ পিএম
  • ২০০ Time View

কালের খবরঃ

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমুরিয়া গ্রামের প্রত্যন্ত গ্রাম লেবুতলা। সেখানে হোগলাপাতার বেড়ায় আঠা দিয়ে পত্রিকা লাগিয়ে ভাঙাচোরা ঘরে বসবাস করেন পক্ষাঘাতগ্রস্ত (প্যারালাইজড) বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে দুই বোন জুঁই মন্ডল (৩২)ও শংকরী মন্ডল(৩০)।অন্যের জমিতে কৃষি শ্রমিকের কাজ করে ও হাঁসমুরগী পালন করে চলছে তাদের সংসার। রোজগারের টাকায় বাবার ওষুধের খরচ চালানো দুরহ হয়ে দাড়িয়েছে তাদের। অসুস্থ বাবা গৌর দাস মন্ডলের শারীরীক অবস্থা বিবেচনা করে বিয়ের বয়েস পেরিয়ে গেলেও বিয়ে না করে রোগাক্রান্ত বাবার সেবাযন্ত করে চলছে দুই মেয়ে।খেয়ে না খেয়ে দিন চলে তাদের।এখনও এ ধরনের দরিদ্র লোক থাকতে পারে তা ভাবাই যায়না।

জুঁই মন্ডল বলেন, আমারা সাত বোন। পাঁচ বোনের বিবাহ হয়েছে। বাকী আছি আমি ও আমার ছোট বোন শংকরী। আমাদেরও  বিবাহের বয়স হয়েছে। এরই মধ্যে গত আট বছর আগে বাবা প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এর পর মা মারা গেল ৫ বছর আগে।পরে আমরা বিয়ের চিন্তা বাদ দিয়ে বাবার সেবা করে যাচ্ছি।আমাদের প্রথম চিন্তা বাবার ওষুধ ও খাওয়া দাওয়া ঠিক রাখা। এর পর আমাদের চলা। দুই বোন প্রায়ই সকালে কাঁচামরিচ দিয়ে পান্তা খাই।দুপুরে কোন রান্না হয়না।রাতে শাকসব্জি বা ছোট মাছ । কতদিন যে বড়মাছ বা মাংস খাইনা তার কোন ঠিক নেই।

তিনি আরো বলেন, বাবার বয়স যখন  সত্তর বছর তখন তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে ঘরে পরেন ।পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় সব আয়ের পথ। একটিমাত্র  ঘর  আমাদের। আয়রোজগার না থাকায় সেটিও বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।ওষুধ ও খাবার জোগার করতে গ্রামের অন্য মানুষের জমিতে বা বাড়িতে কাজ করতে হয় আমাদের।তাইতো আমরা বিয়ের কথা ভুলে বাবাকে নিয়ে এভাবেই বেঁচে আছি।

শংকরী মন্ডল বলেন,মা মারা যাওয়ার পর আমরা দুই বোন সিধান্ত নিলাম অসুস্থ বাবাকে রেখে কিভাবে নিজেরা সুখ করবো। তাইতো  বিবাহ এর চিন্তা বাদ দেই। বাবার ওষুধ, খাবার দাবার আর আমাদের পেট চালাতে নেমেপড়ি শ্রম বিক্রির কাজে। আমার দিদি জুঁই মন্ডল এসএসসি পাশ করে আর লেখা পড়া করেনি। আমিও হাইস্কুলে যেতাম। সব বন্ধ করে দেই। যে ঘরে থাকি তাতে গরু ছাগলও থাকতে পারেনা।জনপ্রতিনিধিদের অনেক বলেছি। কেউ আমাদের কথা শোনেনি। আজ সাংবাদিকদের মাধ্যমে ইউএনও স্যার আমাদের বাড়িতে আসেন। আমাদের অবস্থা দেখে, হাঁস মুরগি পালনের জন্য ২০হাজার টাকা, একমাসের খাবার বাবদ চাল দিয়েছেন। আবার ঘরও করে দিচ্ছেন। ভগবানের কাছে প্রার্থণা করি এই কাজে যারা এগিয়ে এসেছে তাদের মঙ্গল হোক।

প্রতিবেশী বিথী রানী ঘরামী বলেন, দুই বোন জুঁই ও শংকরীর জীবনে পূজা-পার্বন সহ কোন আনন্দের দিন নেই।কারন তারা কখনোই একটা নতুন জামা কিনতে পারে না। বাবার ঔষধ কিনতেই সব টাকা চলে যায় তারপরও তারা কোন রকমে দিন পার করে। তাদের দুঃখের কথা শুনে ইউএনও স্যার নিজে বাড়ি এসে অনেক সাহায্য করেছেন।

আরেক প্রতিবেশী লক্ষী রানী মন্ডল বলেন, গৌর মন্ডলের বিবাহযোগ্য দুই মেয়ে।তারা বিয়ের চিন্তা বাদ দিয়ে বাবার সেবা করে চলেছেন। ওরা কতদিন যে ভালো খাবার খায়না তার কোন ঠিক নেই।এদের জন্য এলাকার চেয়ারম্যন মেম্বারও তেমন কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।

টুঙ্গিপাড়া উপজেলার সাংবাদিক ইমরান শেখ বলেন, আমরা কয়েকজন সাংবাদিক ওই গ্রামে সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে একটি ভাঙাচোরা ঘর দেখতে পাই। তখন প্রতিবেশীদের কাছ থেকে তাদের কথা জানতে পারি।পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানালে তিনি অসহায় ঐ পরিবারের পাশে দাড়িয়েছেন।

এ ব্যাপারে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মঈনুল হক বলেন, গত রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে তাদের দুঃখ দূর্দশার কথা শুনে তাদের বাড়িতে যাই। তখন দেখতে পাই আসলেই তারা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। পরে নগদ ২০ হাজার টাকা, একটি সেলাই মেশিন, ৩০ কেজি চাল ও কয়েকটি কম্বল দিয়েছি। মোবাইলসিম হারিয়ে যাওয়ায় প্রায় একবছর হলো অসুস্থ গৌর দাস মন্ডলের বয়স্কভাতা বন্ধ ছিল। গত সোমবার নতুন মোবাইল ফোন কিনে বয়স্কভাতা চালু করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া খুব শীঘ্রই (একসপ্তহের মধ্যে) উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের একটি নতুন টিনের ঘর তৈরি করে দেয়া হবে।ইতোমধ্যে ঘর তৈরীর কাজ শুরু হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন সবসময় হতদরিদ্র মানুষের কল্যাণে কাজ করে থাকে।এসময় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল হান্নান ও সমাজসেবা কর্মকর্তা প্রকাশ চক্রবর্তী উপস্থিত ছিলেন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Advertise

Ads

Address

Office : Sheikh Fazlul Haque Moni Stadium (2nd floor), Gopalganj-8100 Mobile: 01712235167, Email: kalerkhabor24.com@gmail.com
© All rights reserved 2022

Design & Developed By: JM IT SOLUTION