কালের খবরঃ
আত্মকর্মসংস্থান সৃস্টির লক্ষে গোপালগঞ্জে পাঁচ যুব দরিদ্র নারীকে ল্যাপটপ দিলেন জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম। এই পাঁচজনই নবীন নারী ফ্রিল্যান্সার। এরা ডাটা এন্ট্রি এবং ফ্রিল্যান্সের উপর দক্ষ ও প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। বুধবার (৪ এপ্রিল)দুপুরে জেলা প্রশাসক তার অফিস কক্ষে বসে বিনামূল্যে এসব ল্যাপটপ বিতরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে তথ্য প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার করে দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নারীদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ও উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলে তাদের টেকসই ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসক এই উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, টুঙ্গিপাড়া উপজেলার শেখ রাসেল দুঃস্থ প্রশিক্ষণ ও পুর্নবাসন কেন্দ্র, সরকারি শিশু পরিবার ও সমাজের দরিদ্র শিক্ষিত যুবতীদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তোলা হয়েছে। তাদের আত্মকর্মসংস্থান সৃস্টির লক্ষে জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম দেশের বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ল্যাপটপ সংগ্রহ করেন। সেইসব ল্যাপটপ এইসব দরিদ্র মানুষের মাঝে বিতরণ করেন। শুধু যে ফ্রিল্যান্সার তা নয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের হাতে লেখাপড়ার জন্য ইতোপূর্বে ল্যাপটপ তুলে দিয়েছেন। এসময় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোছাঃ নাজমুন নাহার, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরিফ হোসেন প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
ল্যাপটপ প্রাপ্ত গোপালগঞ্জ শহরের বনি মন্ডল বলেন, আমার বাবা মারা যাবার পর জেলা প্রশাসক স্যারের কাছে আমার মা আর আমি কাজের জন্য আসি । তিনি আমাকে যুব উন্নয়নের মাধ্যমে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এর পর ডিসি অফিসে আমাকে ডাটা এন্ট্রির কাজ দেন। প্রায় একবছর অফিসের কম্পিউটারে কাজ করেছি। এতো দিন আমার কোন কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ছিলো না । এখন ডিসি স্যার আমাকে একটি ডেল কোম্পানীর ল্যাপটপ দিয়েছেন। এই ল্যাপটপ দিয়ে আমি ডাটা এন্ট্রি বা ফ্রিল্যান্সিং করে সংসারের হাল ধরতে পারবো। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবো বলে আমার বিশ্বাস।
অপর নারী মেঘনা আক্তার। তিনি বলেন আমি শিশু পরিবারে থেকে লেখাপড়া শিখেছি। আমার পরিবার খুবই দরিদ্র। বছর খানেক আগে গণশুনানীতে চাকরীর জন্য আসি ডিসি স্যারের কাছে।
তিনি আমাকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের কথা বলেন। আমি প্রশিক্ষণ নিয়ে স্যারের কাছে আসলে তিনি আমাকে ডিসি অফিসে ডাটাএন্ট্রির কাজ দেন। প্রায় একবছর হলো কাজ করেছি। পারিশ্রমিক যা পেয়েছি তা দিয়ে সংসারের প্রয়োজনীয় কাজ করেছি। এখন জেলঅ প্রশাসক স্যার আমাকে একটি ল্যাপটপ উপহার দিয়েছেন। এই ডিভাউসটা পেয়ে আমার খুব উপকার হলো। আমি এই ল্যাপটপের মাধ্যমে ডাটা এন্ট্রি বা ফিল্যান্সিং করে অর্থ উপার্জন ও নিজেকে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবো।
শুধু মেঘনা বা বনি মন্ডল নয়। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ল্যাপটপ নিতে আসা সদর উপজেলার সুকতাইল গ্রামের শাহানাজ খানম, নতুন বাজার আশ্রয়ণ কেন্দ্রের বাসিন্দা মরিয়ম আক্তার ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলার লেবুতলা গ্রামের মনিরা আক্তারের সাথে কথা হয়। তারা বলেন,জেলা প্রশাসক আমাদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য আজ যে ল্যাপটপ দিলেন তার জন্য আমরা ওনার কাছে কৃতজ্ঞ। এই ল্যাপটপের মাধ্যমে আমরা আমাদের জীবনের উন্নয়ন ঘটাতে চাই। আয় রোজগার করে সংসারের হাল ধরতে চাই। পরিবার পরিজন নিয়ে ভালো থাকতে চাই।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম বলেন, মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক আমি প্রতি বুধবার গণশুনানী করে থাকি। জেলাবাসী শিক্ষা, চিকিৎসা, জমিজমা, আর্থিক অস্বচ্ছলতা সহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আমার কাছে আসেন। আমি তাদের বিষয়গুলো শুনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে কথা বলে প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করি। এর মধ্যে শিশু পরিবার,শেখ রাসেল দুঃস্থ প্রশিক্ষণ ও পুনরবাসন কেন্দ্র ও স্থানীয় বিভিন্ন স্থানের পাঁচ যুবনারী আসেন আমার কাছে চাকরী জন্য। আমি তাদের যোগ্যতা যাচাই বাছাই করে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের পরামর্শ দিই। প্রশিক্ষণ শেষে প্রথমে আমার অফিসে ডাটা এন্ট্রির কাজে লাগাই। তাদের কোন ল্যাবটপ না থাকায় অফিসের পুরাতন ল্যাপটপ দিয়ে কাজ করাই। এই কাজগুলো ভালোভাবে করায় আজ এই পাঁচ নারীর প্রত্যেককে একটি করে ডেল কোম্পানীর নতুন ল্যাপটপের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আসাকরি এই ল্যাপটপের মাধ্যমে তারা জীবনের উন্নতি ঘটাতে পারবেন। নিজে এবং পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরাতে সক্ষম হবে।তিনি আরো বলেন,সমাজের অন্য আরো যেসব বেকার যুবক আছেন তারা যদি ফ্রিল্যান্সিং কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে চায় আমি তাদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে প্রস্তুত আছি।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply