সোমবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৩ অপরাহ্ন

জলবায়ু পরিবর্তনে কৃষিপণ্য উৎপাদন ব্যাহত

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৮ জুলাই, ২০২৩, ১১.৫৪ এএম
  • ১৭২ Time View

মহাসিন আহমেদ রানাঃ

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের সকল দেশেই স্থায়ী অথবা অস্থায়ীভাবে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশও  এর বাইরে নয় বরং তুলনামূলক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । বিভিন্ন সংস্থার ভিন্ন তালিকায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সর্বশীর্ষে রয়েছে।২০১০ সালে আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ‘জার্মান ওয়াচ’-এ প্রকাশিত হয়েছিল জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি দেশের মধ্যে প্রথমেই অবস্থান করছে বাংলাদেশ। অন্যান্য ক্ষয়-ক্ষতি বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে, সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে লবণাক্ততাও।

কৃষিতে খরার প্রভাবঃ

কোন এলাকায় বৃষ্টিপাতের তুলনায় বাষ্পীকরণের মাত্রা বেশি হলে সেখানে খরা দেখা দেয়। কৃষি খরা বলতে আবহাওয়ার নিয়ামকগুলো যেমন বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, বাতাসের আর্দ্রতা, বাষ্পীভবন ইত্যাদির হ্রাস বৃদ্ধিজনিত কারণে ফসলের জীবন চক্রের যে কোনো অবস্থায় পানির অভাবে জৈবিক কর্মকান্ড ব্যাহত হওয়াকে বোঝায়। এপ্রিল থেকে মধ্য নভেম্বরের মধ্যে পর পর ১৫ দিন বৃষ্টি না হলে খরার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।

কৃষিতে খরা একটি বহুল প্রচলিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রতি বছর ৩০ থেকে ৪০ লাখ হেক্টর জমি বিভিন্ন মাত্রার খরায় আক্রান্ত হয়। গাছের বৃদ্ধি পর্যায়ে গড় বৃষ্টিপাতের অভাবে মাটিতে পানিশূন্যতা সৃষ্টি হয়, যা গাছের ক্ষতি করে। দেশে বিভিন্ন মাত্রার খরায় আক্রান্ত ৮৩ লাখ হেক্টর চাষযোগ্য জমির শতকরা ৬০ ভাগ জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়। এ ছাড়াও খরা আউশ ও বোরো ধান, পাট, ডাল ও তেল ফসল, আলু, শীতকালীন সবজি এবং আখ চাষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। মার্চ-এপ্রিলের খরা চাষের জন্য জমি প্রস্তুতিতে অসুবিধার সৃষ্টি করে ফলে বোনা আমন, আউশ এবং পাট চাষ যথাসময়ে করা যায় না।

মে-জুন মাসের খরা মাঠে দন্ডায়মান বোনা আমন, আউশ ও বোরো ধান, পাট, ডাল ও তেল ফসল, আলু, শীতকালীলন সবজি এবং আখ চাষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। মার্চ-এপ্রিলের খরা চাষের জন্য জমি প্রস্তুতিতে অসুবিধার সৃষ্টি করে ফলে বোনা আমন, আউশ এবং পাট চাষ যথাসময়ে করা যায় না। মে-জুন মাসের খরা মাঠে  বোনা আমন, আউশ এবং পাট ফসলের ক্ষতি করে। আগস্ট মাসের অপরিমিত বৃষ্টি রোপা আমন চাষকে বাধাগ্রস্ত করে। সেপ্টেম্বর- অক্টোবর মাসের কম বৃষ্টিপাত বোনা ও রোপা আমন ধানের উৎপাদন কমিয়ে দেয় এবং ডাল ও আলু ফসলের চাষকে দেরি করিয়ে দেয়। কাঁঠাল, লিচু, কলা ইত্যাদি ফলের গাছ অতিরিক্ত খরায় মারা যায়। এছাড়াও শুষ্ক মৌসুমে নদী-নালার নাব্যতা হ্রাস এবং গাছের প্রস্বেদনের হার বেড়ে যাওয়ায় সুপেয় পানির অভাব দেখা দিচ্ছে।

কৃষিতে তাপমাত্রার ক্ষতিকর প্রভাব

তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে উফশী ধানের ফলন কমে যাবে এবং গমের রোগের আক্রমণ বাড়বে। বাংলাদেশে বর্তমানের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে গম চাষ সম্ভব হবে না। ধান গাছের কচি থেকে ফুল ফোটার সময় তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার চেয়ে বেশি হলে এবং অতি নিম্ন তাপে (২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে) শিষে ধানের সংখ্যা কমে যেতে পারে। ফুল ফোটা বা পরাগায়নের সময় যদি অতি উষ্ণ তাপ থাকে তাহলে চিটার সংখ্যা থোড় অবস্থার চেয়ে বেশি হবে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ার কারণে ধান গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, ধান গাছ হলুদ বর্ণ ধারণ করে, ধানের চারা দুর্বল হয় এবং ফসলের জীবনকাল বেড়ে যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পোকামাকড় এবং বিভিন্ন উদ্ভিদ রোগের আক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে। দানা শস্যেসহ বিভিন্ন ফসলে মিলিবাগ, এফিড (শোষক পোকা) ও ব্যাকটেরিয়া (জীবাণু গঠিত রোগ) ও ছত্রাকজনিত রোগ এর আক্রমণ বেশি বেশি দেখা যাচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কৃষিকাজের ওপর ধারাবাহিক অসামঞ্জস্যতা তৈরি হয়েছে। খরা এবং তাপমাত্রার ক্রমবৃদ্ধির কারণে বহু প্রজাতির ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। তেমনি আগাছা, রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অঞ্চলভেদে মাটির উপাদানে তারতম্য ঘটছে এবং কাঙ্ক্ষিত ফসল উৎপাদনেও ব্যাহত হচ্ছেন কৃষক।  উত্তরাঞ্চলে সেচের পানিতে আরেক বিপত্তি ঘটছে। সেখানকার ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা বেশি হওয়ায় ফসলের মাধ্যমে তা মানবদেহে প্রবেশ করছে। এছাড়া উত্তরাঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পর্যাপ্ত পানি ফসলের খেতে সরবরাহ করা যাচ্ছে না, যার কারণে ফসল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার নিচে নেমে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে আমরা বলতে পারি, জলবায়ু পরিবর্তন রোধ না হলে শুধু দেশের নিম্নাঞ্চলই প্লাবিত হবে না, এর প্রভাব পড়বে আমাদের বনজ ও কৃষিসম্পদের ওপরেও।

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Advertise

Ads

Address

Office : Sheikh Fazlul Haque Moni Stadium (2nd floor), Gopalganj-8100 Mobile: 01712235167, Email: kalerkhabor24.com@gmail.com
© All rights reserved 2022

Design & Developed By: JM IT SOLUTION