কালের খবরঃ
আসন্ন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে গোপালগঞ্জে গরু খামারীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। সারা বছর লালন পালন শেষে এখন তাদের উৎপাদিত পশু বিক্রির অপেক্ষায়।কেউ কেউ বিক্রি শেষ করেছে আবার কেউ বেশী লাভের আশায় অপেক্ষা করছেন।এসব পশুকে তাজামোটা বা স্বাস্থ্যবান করতে যে যার মত যত্ম করছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে,জেলার ছোটবড় ৩ হাজার ২৫ টি খামারে কোরবানির জন্য পশু লালন পালন হয়েছে। এবছর কোরবানিযোগ্য ৩৫ হাজার ২১২ টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে।
কোন প্রকার ক্ষতিকর খাবার না খাইয়ে নিরাপদ মাংসের জন্য এসব গবাদি পশু উৎপাদন করা হয়েছে। গরু মোটা তাজা করণে কোন প্রকার স্টেরয়েড,কেমিক্যাল বা অপদ্রব্য ব্যবহার বা পুশ করা হয়নি বলে দাবী জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এবং খামারীদের। সম্পুর্ণ প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে এসব পশু মোটাতাজা করা হয়েছে। গো খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন খরচ বেশী হলেও লাভের আশা খামারীদের।
গোপালগঞ্জ প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোবিন্দ চন্দ্র সরদার বলেন, এবছর জেলায় ১৯ হাজার ৫৪০ টি ষাঁড়, ৪৪০ টি বলদ, ৪ হাজার ১১৬ টি গাভী, ৮টি মহিষ,১০ হাজার ৯০৭ টি ছাগল, ১৭৫ টি ভেড়া ও ২৮ টি গাড়ল কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব পশু খড়, গম ও ডালের ভূষি, ঘাস, খৈইল, ধানের কুড়া ও কাঁচা ঘাস খাওয়ায়ে মোটা তাজা করা হয়েছে। গোপালগঞ্জের কোন পশুতে খামারিরা কোন কেমিক্যাল বা অপদ্রব্য ব্যবহার করেনি। প্রাণি সম্পদের পরামর্শে খামারীরা মানব দেহের জন্য নিরাপদ মাংস উৎপাদন করেছেন। এইসব পশু বাজারজাত করণের জন্য আমরা তাদের পরামর্শ দিয়েছি। ইতিমধ্যেই খামার থেকে গবাদি পশু বিক্রি শুরু হয়েছে। যে দাম পাচ্ছেন তাতে ভালোই লাভ হচ্ছে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের মৃত নূর সরদারের ছেলে মোঃ হাফিজ সরদার একটি গরুর খামার তৈরী করেছেন।সেখানে তিনি ৩৯টি গরু মোটাতাজা করেছেন। ঈদুল ফিতরের সময় ১৯টি গরু বিক্রি করেন। আর ঈদুল আযহার জন্য ২৯টি গরু আছে। এখন এই গরু বিক্রিযোগ্য। তিনি বলেন, এবছর গবাদি পশুর খাবারের দাম বেশী। এতে গরু লালন পালন করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কাঁচা ঘাসের উপর নির্ভর করে গরু পালন করছি। তবে এবছর বাজারে গরুর যে দাম আছে তাতে লাভ হবে। তবে দানাদার গো খাদ্যের দাম কম হলে প্রান্তিক খামারীদের গরু পালনে শুবিধা হতো।
ওই খামারের শ্রমিক মুকুল মোল্লা বালেন, প্রাণি সম্পদ বিভাগের ডাক্তার প্রিয়াংকা রানী মোদকের পরামর্শ মোতাবেক গরু লালন পালন করা হয়েছে। প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ানো, দিনে দুইবার গোসল, কাঁচাঘাস, সময় মত ভেকসিন দেয়া এভাবে গরু বড় করেছি। এবার দাম ভালো। আশাকরি মালিকের লাভ ভালোই হবে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের ভ্যাটেনারী সার্জন ডাঃ প্রিয়াংকা রানী মোদক বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর প্রতিটি খামারীকে স্বাস্থ্য সম্মত পশু তৈরীতে পরামর্শ দিয়ে আসছি। সময়মত ভ্যাকসিন দিয়েছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে খামারীদের সাথে কথা বলে সমস্যা সমাধান করা হয়েছে। খামারী এবং আমাদের যৌথ প্রয়াসে একটা ভালো ফল এসেছে। আশাকরি খামারীরা এবছর লাভবান হবেন এবং নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃস্টি হবে।
জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা আরো বলেন,গবাদি পশুর ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে আমরা হাট গুলোতে ভারত সহ অন্যান্য জেলার পশু ক্রয় বিক্রয় নিরুৎসাহিত করেছি। আশা করছি খামারিরা কোরবানির হাটে ন্যায্য মূল্যে পশু বিক্রি করে লাভবান হবেন। পাশাপাশি কোন খামারী যাতে অসুস্থ বা ক্ষতিকারক কেমিকেল ব্যবহারকারী পশু বিক্রি করতে না পারে সেজন্য পশুর হাটে ভ্রম্যমাণ টিম কাজ করবে।
জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম বলেন, কোরবানির পশুর হাট ও ঈদ উল আযহা শান্তিপূর্ণ ও আনন্দময় করতে সভা করা হয়েছে। সভায় সিধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে পশুরহাটের নিরপত্তা,লেনদেন, জালটাকার ব্যবহার যাতে না হয় সে জন্য পুলিশ ও ইজারাদাররা কাজ করবেন।জেলার ৬টি পশুর হাট পাইলট প্রবল্পের আওতায় এনে ক্যাশলেস লেনদেন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কোরবানির পর কাঁচা চামড়া সময় মত লবন দিয়ে সংরক্ষণ করতে প্রশাসন ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।হাসিল দেয়ার সময় পশু ক্রয়কারীকে পরিমানমত লবন কিনতে উৎসাহিত করা হবে। যাতে করে কোন একটি চামড়াও যেন নষ্ট না হয়।এছাড়া পশুর হাটে আইনশৃংখলা বাহিনীর পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করবেন।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply