কালরে খবরঃ
গোপালগঞ্জে ঘুর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে খালের পানির ওপর কচুরিপানার স্তুপ জমে নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। চলতি রবি মৌসুমে এই খালের পানি ব্যবহার করে চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। খালে কচুরিপানা এমনভাবে জমেছে, কচুরিপানা পঁচে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ৬ গ্রামের মানুষ খালের পানি ব্যবহার করতে পারছে না। এতে ওইসব গ্রামের অন্তত ৫ হাজার পরিবার ওজু, গোসল, রান্না বান্না, কাপড় ধোয়া সহ গৃহস্থালী কাজে খালের পানি ব্যবহার করতে পারছেনা। ওই ৬ গ্রামের অন্তত ২০ হাজার মানুষ বিপাকে পড়েছেন। মৎস্যজীবিরা এখান থেকে মাছ শিকার করতে পারছেনা। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার আড়পাড়া ও তেতুলিয়া গ্রামের শতাধিক মৎস্যজীবি পরিবার মাছ শিকার করতে না পেরে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। এছাড়া এই খাল দিয়ে পণ্য পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। এতে ব্যবসা বানিজ্যের ক্ষতি হচ্ছে।
এই অবস্থা নিরসনে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক একেএম হেদায়েতুল ইসলাম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহসিন উদ্দীন, গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুর রহমান সহ বিভিন্ন দপ্তরের পদস্থ কর্মকর্তা ঘটনা স্থল পরিদর্শন করে (৭ নভেম্বর)কচুরিপানা অপসারনে কাজ শুরু করেছে।
উলপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ কামরুল হাসান বাবুল বলেন, বসরত খাল দেশীয় প্রজাতির মৎস্য সম্পদে পরিপূর্ণ। এছাড়া এই খালের পানি সেচ দিয়ে গোপালগঞ্জ ও কাশিয়ানী উপজেলার বিশাল এলাকার চাষাবাদ করা হয়। প্রায় ৮৫ বছর আগে এই অঞ্চলে জলাবদ্ধতার কারণে চাষাবাদ ব্যাহত হত। এই অঞ্চলের ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে সমাজ সেবক চন্দ্রনাথ বসু গোপালগঞ্জের তেতুলিয়া থেকে কাশিয়ানী উপজেলার বলুগা পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বসরত খাল খনন করেন। এই খালকে মধুমতি এমবিআর চ্যানেলের সাথে যুক্ত করা হয়। খননের পর এলাকার জলাবদ্ধতা দূর হয়। কৃষক এই খালের পানি ব্যবহার করে চাষাবাদ করে আসছে। এছাড়া তেতুলিয়া ও আড়পাড়া গ্রামের মৎস্যজীবিরা এই খাল থেকে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। ঘুর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে ওই খালের প্রায় ৬ কিলোমিটার জুড়ে কচুরিপানার স্তুপ জমেছে। এই কচুরিপানার স্তুপ প্রায় ৪ ফুট ঘন। এর ওপর দিয়ে গ্রামের মানুষ হাটাচলা করছে। কচুরি পানার স্তুপ নীচে পানি ঢাকা পড়েছে। তাই এলাকাবাসী খালের পানি ব্যবহার করতে পারছেন না। এতে ৬ গ্রামের ২০ হাজার মানুষ বিপাকে পড়েছেন। শতাধিক মৎস্যজীবি পরিবার পেশা হারাতে বসেছে। পন্য পরিবহন করা যাচ্ছেনা। ফলে ব্যবসা বানিজ্য ব্যাহত হচ্ছে।
তেতুলিয়া গ্রামের মৎস্যজীবি পলাশ বিশ্বাস (৪৫) বলেন, বসরত খালে সারা বছর দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। এই মাছ শিকার করে আমরা জীবিকা নির্বাহ করি। খালে কচুরিপানা জমেছে। আমরা চেষ্টা করেছি কচুরিপানা অপসারণ করতে। কিন্তু কচুরিপানা স্তুপ খুব বেশি। তাই আমাদের পক্ষে পরিস্কার করা সম্ভব হয়নি।
কাশিয়ানী উপজেলার নিজামকান্দি গ্রামের মনির মোল্লা (৫০) বলেন, এই খালের পানি দিয়ে আমরা ফসল ফলাই। ওজু গোসল, রান্না বান্না, কাপড় ধোয়া সহ গৃহস্থালীর সব কাজ মহিলারা সম্পন্ন করে। কিন্তু খালে কচুরিপানা জমেছে। তাই পানি আমরা ব্যবহার করতে পারছি না। এতে আমাদের দুর্ভোগ বেড়েছে। জেলা প্রশাসনের তত্ত্ববধানে পানি উন্নয়নবোর্ড কচুরিপানা অপসারণ শুরু করেছে।
কাশিয়ানী উপজেলার রামদিয়া বাজারের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী বলেন, এই খাল দিয়ে গোপালগঞ্জ ও রামদিয়া বাজারের বিভিন্ন পন্য পরিবহন করা হয় । খালে কচুরিপানার স্তুপ জমেছে। এই খাল দিয়ে নৌযান চলাচল করতে পারছে না। এতে আমাদের ব্যবসা বানিজ্য ব্যাহত হচ্ছে। তাই আমরা দ্রুত খাল পরিস্কার করে দিতে অনুরোধ করছি।
গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুর রহমান বলেন, ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খালের প্রস্তত ৫শ’ ফুট ও গভীরতা প্রায় ৫০ ফুট। ঝড়ে খালের ৬ কিলোমিটার জুড়ে পানির ওপর কচুরিপানার ৪ থেকে ৫ ফুট স্তুপ জমেছে । আমরা সোমবার থেকে খালের কচুরিপানা অপসারণ শুরু করেছি। খালটিকে কচুরিপানা মুক্ত করে চলাচলের উপযোগি করে তুলতে।
জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, আমরা সমন্বিতভাবে এই খালের কচুরিপানা পরিস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। খাল পরিস্কার করে আমরা এটিকে দ্রুত সচল করে দেব।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply