সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:০৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
গোপালগঞ্জে তারুণ্যের উৎসব উদযাপনে ফুটবল টুর্নামেন্ট! গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা চ্যাম্পিয়ন গোপালগঞ্জে দুই প্রতিষ্ঠানে দুদকের অভিযান! মিলিছে অনিয়মের সত্যতা মুকসুদপুরে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ৬ ডাকাত গ্রেপ্তার ইয়াবাসহ টুঙ্গিপাড়া উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক গ্রেপ্তার, দুই মাদক সেবির কারাদন্ড গোপালগঞ্জ মহিলা কলেজে অনুষ্ঠিত হল বাহারি পিঠা উৎসব গোপালগঞ্জে জুলাই বিপ্লবে নিহত ও আহত ৩০ জনকে আর্থিক সহায়তা জিয়াউর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে গোপালগঞ্জে বিএনপির দোয়া মাহফিল গোপালগঞ্জে আধিপত্য বিস্তারে দুই পক্ষের ৩০জন আহত জবাবদিহি নিশ্চিতে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসকের ব্যতিক্রম আয়োজন মুকসুদপুরে দুই লাখ টাকার ভেজাল সার ও কিটনাশক জব্দ, দুই ব্যবসায়ীকে জরিমানা

“দুধ না খেলে, হবে না ভালো ছেলে”

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২.৩৪ পিএম
  • ২৬০ Time View

প্রমিত সাহা, গোপালগঞ্জঃ

মানুষের ক্ষেত্রে, বিজ্ঞানীদের মধ্যে আইনস্টাইন কিংবা নিউটনকে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করা হয়। চিত্রকরদের মধ্যে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চিকে এবং ভাস্করদের মধ্যে মাইকেল এঞ্জেলোকে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করা হয়। তেমনি শ্রেষ্ঠ খাদ্য দুধ। এ নিয়ে বর্তমানে কোনো ধরনের দ্বিমত বা বিতর্ক নেই। একটি মজবুত দালান নির্মাণের জন্য ভিত্তি মজবুত হওয়া জরুরি। তদ্রুপ একটি দেশের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্যও ভিত্তি মজবুত হওয়া প্রয়োজন। আর এই ভিত্তি হলো আজকের শিশুরা। আজকের শিশুরা যদি সুস্থ-সবল হয়ে বেড়ে ওঠে, তাহলে সুন্দর দেশ গঠিত হবে। এক্ষেত্রে দুধ হলো সর্বোত্তম হাতিয়ার। কারণ দুধ শিশুদের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য। দুধে বিস্ময়করভাবে খাদ্যের ৬টি পুষ্টি উপাদানই বিদ্যমান। আমরা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে অনেক খাদ্যই গ্রহণ করে থাকি, যার মধ্যে দুধ উৎকৃষ্ট বলেই দুধকে শ্রেষ্ঠ খাদ্য বলা হয়। করোনার ভয়াল কালো থাবায় বিপন্ন আজ মানবসভ্যতা। এই পরিস্থিতিতে আমাদের দরকার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে দুধ। INFS অর্থাৎ, The Institute of Nutrition and Food Science কর্তৃক স্বীকৃত ও প্রকাশিত একটি ছকে দেখা যায় যে, ১০০ গ্রাম গরুর দুধ থেকে ৬৭ কিলোক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। প্রতিদিনের জন্য প্রয়োজনীয় মাত্রার ক্যালরি পেতে হলে মোটামুটি পরিশ্রমী পূর্ণবয়স্ক একজন পুরুষকে প্রতিদিন ২০০ গ্রাম এবং মোটামুটি পরিশ্রমী পূর্ণবয়স্ক একজন নারীকে ১৫০ গ্রাম দুধ গ্রহণ করতে হবে। দুধে প্রচুর পুষ্টি উপাদান থাকে। ক্যালসিয়াম ছাড়া দুধের মধ্যে ফসফরাস, আয়রন, জিংক, কপার, ম্যাঙ্গানিজের পরিমাণও অনেক বেশি থাকে। দুধ খাওয়ার উপকারিতা অনেক।নিয়মিত দুধ খেলে স্ট্রোকে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা কমে যায়। দুধ অন্যান্য খাবারের বিষাক্ত উপাদানের ক্ষতি কাটায়। দুধ খেলে আমাদের শরীরে সেরোটোনিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। সেরোটোনিন ‘ব্রেইন ক্যামিকেল’ নামে পরিচিত। এই উপাদান শরীরে পর্যাপ্ত সৃষ্টি হলে মন ভালো থাকে, মুড ভালো থাকে। তাই একে অনেকে ‘হ্যাপি হরমোন’ বলেও ডাকেন। দুধ খেলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ে। দুধ খেলে শরীরের হাড় ও দাঁতের সামর্থ্য বাড়ে। দুধ খেলে হৃৎপিণ্ডের সামর্থ্য বাড়ে। যারা নিয়মিত দুধ পান করেন তাদের যেকোনো ক্ষত দ্রুত সেরে যায়। দুধ খেলে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে। নিয়মিত দুধ খেলে আর্টারিওস্ক্যারোসিসে আক্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচা যায়। এ রোগ হলে আমাদের আর্টারিগুলোর দেয়াল পুরু, শক্ত ও অস্থিতিস্থাপক হয়ে যায়। এতে শরীরের রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। এতে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। নিয়মিত দুধ খেলে শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব দূর হয়।এছাড়া বর্তমানে আমাদের বিশ্বে করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজমান। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে হলুদ মিশ্রিত দুধ। প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এটিতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তাই এটি ফ্লু, সর্দি, কাশির সমস্যায় বা সর্বদা এটি গ্রহণ করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। হলুদ দুধ তার অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রভাবের জন্য বরাবরই সবচেয়ে জনপ্রিয়। এর সেবনে বাতের মতো সমস্যা দূর হয়। দেহের বাইরের বা অভ্যন্তরীণ অংশে কোনও আঘাত থাকলে, হলুদ দুধ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিরাময়ে সহায়তা করে। কারণ- এটি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্যের কারণে ব্যাকটেরিয়াকে বাড়তে দেয় না। হলুদের দুধ আমাদের মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে, স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে এবং ভাল ঘুম হতে সহায়তা করে। রাতে যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে হলুদের দুধ পান তাদের জন্য খুব উপকারী। প্রাচীন পুঁথি ও শাস্ত্রে দুধের গুনাগুন সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে। গরুর দুধের প্রোটিনের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশই হলো ক্যাসেইন। যার মধ্যে এমন অ্যামাইনো এসিড বিদ্যমান যা কিনা অন্য কোনো খাদ্যে পাওয়া যায় না। দুধের মধ্যে হোয়ে প্রোটিন বিদ্যমান যা লিউসিন, আইসোলিউসিন এবং ভ্যালিনের মতো অ্যামাইনো এসিডসমৃদ্ধ। এ সকল উপাদান দেহের বৃদ্ধি এবং গঠনে সহায়তা করে। যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার এর তথ্য অনুযায়ী, ১০০ গ্রাম গরুর দুধে ৩.২৫ শতাংশ চর্বি এবং ১০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম বিদ্যমান। প্রক্রিয়াজাত এবং প্যাকেটজাত দুধে এই পরিমাণ আরো বেড়ে যায়। ২০০৪ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যারা কম ক্যালরির ডায়েট অনুসরণ করেন তাদের দিনে তিনবার দুগ্ধজাত দ্রব্য খাওয়া প্রয়োজন। এতে তাদের ওজন কমবে এবং তাদের ক্যালসিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। পাশাপাশি টাইপ টু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং হৃদরোগের সম্ভাবনা কমবে। যাদের ল্যাকটোজ ইনটালারেন্স নেই তারা অবশ্যই ওজন কমানোর ডায়েটে দুধ রাখতেই পারেন। এর ফলে তাদের ওজনও কমবে। অর্থাৎ; আমরা দেখতে পাচ্ছি, “কিছু ধাপ অবলম্বনে দুধ ডায়েটে যথেষ্ট সহায়তা করে।” মানবদেহের ৯৯ শতাংশ ক্যালসিয়ামই হাড় ও দাঁতে সংরক্ষিত থাকে। আর অধিকাংশ ক্যালসিয়ামই আমরা দুধ থেকে পেয়ে থাকি। ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস পটাশিয়াম, ভিটামিন কে, ডি, বি এর সমন্বয়ে হাড় ও দাঁতের জন্য দুধ একটি প্রাকৃতিক শক্তিবর্ধক। আবার হাঁড়ের ৫০ শতাংশই হলো প্রোটিন যার অধিকাংশই আমরা দুধ থেকে পেয়ে থাকি। দাঁতের এনামেল ক্ষয়রোধেও প্রয়োজন নানা প্রকারের হোয়ে প্রোটিন। আগেই বলেছি, দুধ থেকে আমরা হোয়ে প্রোটিন পেয়ে থাকি। আবার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে আমাদের প্রয়োজন ভেজিটেবল প্রোটিন। যা আমরা দুধ থেকে পেয়ে থাকি। অর্থাৎ; আমরা দেখতে পাচ্ছি, দুধই শ্রেষ্ঠ খাদ্য। তবে এখন প্রশ্ন, যারা নানা কারণে গরুর দুধ খেতে চান না বা পারেন না তাদের কাছে কি দুধ শ্রেষ্ঠ খাদ্য নয়? দুধই শ্রেষ্ঠ খাদ্য। এখানে কিন্তু শুধু গরুর দুধ বোঝানো হয়নি। এবার সেই প্রশ্নটির উত্তর দিই, যারা নানা কারণে গরুর দুধ খেতে চান না বা পারেন না তাদের জন্য রয়েছে সয়ার দুধ। এটি একটি তৃণভিত্তিক পানীয় যা সয়াবিন ভিজিয়ে, পিষে একটি মিশ্রণ তৈরি করে সেটি সিদ্ধ করে, ছেঁকে তৈরি করা হয়। এটি তেল,জল ও প্রোটিনের অতেজস্ক্রিয় নির্যাস। এর মধ্যে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, চর্বি, ভিটামিন বি ১২, ক্যালসিয়াম, রিবোফ্লোবিন, ভিটামিন ডি এবং ফসফরাস বিদ্যমান। এক কাপ বা ২৪০ মিলি সয়াদুধে ১০৫ ক্যালরি, ৬ গ্রাম প্রোটিন, ১২ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট এবং ৪ গ্রাম চর্বি বিদ্যমান। এভাবে যারা নানা কারণে গরুর দুধ খেতে চান না বা পারেন না তাদের কাছে সয়াদুধের মাধ্যমে দুধ হয়ে উঠতে পারে শ্রেষ্ঠ খাদ্য। তবে বর্তমানে কিছু স্বার্থান্বেষী এবং লোভী ব্যক্তিরা তাদের অর্থের লোভে দুধে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর পদার্থ মিশ্রিত করছে। তারা শুধু দুধে ক্ষতিকর পদার্থ মিশ্রিত করছে না, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তথা শিশুদের ধ্বংসের দিকে ধাবিত করছে। তাই শিশুদের রক্ষার নিমিত্তে স্বার্থান্বেষীদের প্রতিরোধ এবং প্রতিকারের জন্য মানবসভ্যতাকে সচেতন হতে হবে।

“কেননা, দুধই শ্রেষ্ঠ খাদ্য
স্বার্থান্বেষীদের দূর করতে হবে
এটি মোদের দায়িত্ব।”

আমাদের বাংলাদেশ স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে পা দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ঝাঁপিয়ে পড়া মুক্তিযোদ্ধাদের কঠোর প্রয়াসে আমরা পেয়েছি আমাদের স্বাধীনতা। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ, ২০২০ সালের ১০ই ডিসেম্বরে পদ্মাসেতুর সর্বশেষ স্প্যান স্থাপনসহ শত শত সাফল্যে উদ্ভাসিত আজ বাংলাদেশ। এই উন্নয়নের ধারাকে বয়ে নিয়ে যেতে পারবে আজকের শিশুরাই। আর এজন্য তাদের জ্ঞানার্জন ও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। তাই তাদের প্রয়োজন নিয়মিত শ্রেষ্ঠ খাদ্য গ্রহণ করা। শ্রেষ্ঠ খাদ্য মানেই যে খুব ব্যয়বহুল, তা কিন্তু নয়। কারণ- দুধ হলো শ্রেষ্ঠ খাদ্য যা অর্থনৈতিকভাবে ব্যয়বহুল নয়। তবে দুঃখের কথা এই যে, আজকের অনেক শিশুরা জাঙ্কফুডের দিকে বেশি ঝুঁকে রয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে,”স্বাস্থ্যই সম্পদ।” তাই সুস্থ-সবল দেহের অধিকারী হওয়ার জন্য শিশুদেরকে জাঙ্কফুড বাদ দিয়ে শ্রেষ্ঠ খাদ্য দুধ খাওয়া উচিত।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Advertise

Ads

Address

Office : Sheikh Fazlul Haque Moni Stadium (2nd floor), Gopalganj-8100 Mobile: 01712235167, Email: kalerkhabor24.com@gmail.com
© All rights reserved 2022

Design & Developed By: JM IT SOLUTION