কোটালীপাড়া প্রতিনিধিঃ
ভাগ্যের অন্বেষণে ৯ বছর আগে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমায় যুবক হাচিবুর রহমান (৩১)। জমিজমা বিক্রি করে তখন কৃষক বাবা হাচিবুরকে বিদেশ পাঠিয়েছিলেন। বিদেশ যাওয়ার পরে তাদের সংসার ভালোই চলছিল। ৪ বছর বিদেশ থাকার পরে হাচিবুর ৫ মাসের ছুটিতে দেশে আসেন। তখন হাচিবুরের বাবা-মা ঘটা করে ছেলেকে বিয়ে দিয়ে পুত্রবধু ঘরে আনেন। ৩ মাস সংসার করার পরে নববধু তানিয়া বেগমকে রেখে পুনরায় মালয়েশিয়া চলে যায় হাচিবুর।
হাচিবুর বিদেশ চলে যাওয়ার পর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই এই দম্পত্তির ঘরে ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। কন্যাটির নাম রাখা হয় জামিলা খানম। জামিলার বয়স এখন ৪ বছর। হাচিবুর বিদেশ চলে যাওয়ার পর থেকে প্রতিনিয়তই পরিবারের সাথে যোগাযোগ রেখে আসছিল। হঠাৎ করে গত ১৭ মাস ধরে পরিবারের সাথে তার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে দিশেহারা হাচিবুরের পরিবার। পরিবারের লোকজন বিভিন্ন মাধ্যমে হাচিবুরের সন্ধান পাওয়ার চেষ্টা করেন।
৬ মাস পূর্বে মালয়েশিয়া প্রবাসী ইব্রাহিম মিয়া নামে এক ব্যক্তি হাচিবুরের বাবা-মাকে ফোন করে জানায় তাদের সন্তান মালয়েশিয়ার জেলে আছে। তাকে ছাড়াতে অনেক টাকার প্রয়োজন। এরপর ইব্রাহিম মিয়া ও মালয়েশিয়ার আরেক প্রবাসী ওলিউল্লা মৃধা নামের ২ ব্যক্তি মিলে হাচিবুরকে ছাড়ানোর কথা বলে টাকা নেওয়া শুরু করে। সন্তানকে ছাড়াতে এই ২ ব্যক্তিকে টাকা দিতে দিতে হাচিবুরের পরিবার এখন নিঃস্ব। সর্বশেষ ভিটেমাটি বিক্রি করে ইব্রাহিম মিয়া ও ওলিউল্লাকে ৮ লক্ষ টাকা দিয়েছে হাচিবুরের পরিবার।
মালয়েশিয়ায় ১৭ মাস ধরে নিখোঁজ হাচিবুর রহমান গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের গচাপাড়া গ্রামের ইসমাইল মিয়ার ছেলে।
অপরদিকে ইব্রাহিম মিয়া কোটালীপাড়া উপজেলার বলুহার গ্রামের ইউনুচ মিয়ার ছেলে বলে সরেজমিনে জানাগেছে। ইব্রাহিমের মাধ্যমে ৯ বছর আগে হাচিবুর রহমান বিদেশ গিয়েছিল বলে জানিছেন হাসিবুরের পিতা ইসমাইল মিয়া।
তিনি বলেন, আমার ছেলেকে মালয়েশিয়ার জেল থেকে ছাড়াতে হবে বলে ৬ মাস আগে ইব্রাহিম মিয়া ফোন করে আমাদের কাছ থেকে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা নিয়েছে। এরপর ইব্রাহিম ও তার ফুফাতো ভাই ওলিউল্লা মিলে আরো ৭৫ হাজার টাকা নেয়। গত ৬ মাস ধরে বিভিন্ন সময়ে আমাদের কাছ থেকে ফোন করে টাকা নিতে থাকে। সর্বশেষ এই ২ জন মিলে আমাদের কাছ থেকে ৮ লক্ষ টাকা নিয়েছে। এই ৮ লক্ষ টাকা আমরা ভিটেমাটি বিক্রি করে সংগ্রহ করে দিয়েছি।
কান্নাজড়িত কন্ঠে হাচিবুরের মা সালমা বেগম বলেন, আমার ছেলেকে মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ইব্রাহিম ও ওলিউল্লাকে টাকা দিতে দিতে আমরা এখন নিঃস্ব। এতে আমাদের কোন কষ্ট নেই। আমরা আমাদের সন্তানকে ফিরে পেতে চাই।
এ বিষয়ে ইব্রাহিম মিয়ার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার পিতা ইউনুস মিয়া বলেন, ৯ বছর আগে আমার ছেলে ইব্রাহিম মিয়া গচাপাড়া গ্রামের হাচিবুরকে মালয়েশিয়া নিয়েছিল। শুনেছি হাচিবুর এখন ওখানের জেলে আছে। তাকে ছাড়ানোর কথা বলে আমার ছেলে ইব্রাহিম ও আমার ভাগ্নে ওলিউল্লার টাকা নেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই।
কোটালীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ ফিরোজ আলম জানান, যেহেতু ঘটনাটি মালয়েশিয়া বসে ঘটেছে সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই। তবে টাকার লেনদেনের বিষয়টি যদি কোটালীপাড়ায় বসে হয়ে থাকে তাহলে অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply