কোটালীপাড়া প্রতিনিধিঃ
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় চার কন্যাসহ শিক্ষক দম্পতি নিখোঁজের ঘটনায় এলাকার চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষক খোকন চন্দ্র রায় (৫৫) ও তার স্ত্রী শিখা রানী রায় (৪৫) নামে এই দম্পতি চার মেয়েসহ ১০ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। বিভিন্ন স্থানে খোঁজখবর নিয়েও তাদের কোন সন্ধান করতে পারেনি সহকর্মী ও স্বজনরা
নিখোঁজ শিক্ষক খোকন চন্দ্র রায় কোটালীপাড়া উপজেলার ১২৭ নং গজালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও তার স্ত্রী শিখা রানী রায় একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
বিদ্যালয়ের অপর শিক্ষকদের সূত্রে জানাগেছে, গত ৮জুন বৃহস্পতিবার প্রধান শিক্ষক খোকন চন্দ্র রায় ও তার স্ত্রী শিখা রানী রায় বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে প্রতিদিনের মধ্যে শিক্ষার্থীদেরকে পাঠদান করান। ওই দিনই ৩দিনের ছুটি চেয়ে ( ১১,১২,১৩ জুন) বিদ্যালয়টিতে একটি আবেদন জমা দেয়। ১৪ জুন এই শিক্ষক দম্পতির বিদ্যালটিতে উপস্থিত হওয়ার কথা থাকলেও ২০জুন পর্যন্ত তারা কর্মস্থলে যোগদান করেনি। এমনকি শনিবার (২৪জুন) পর্যন্ত তাদেরকোন সন্ধ্যাান মেলেনি।
শুক্রবার (২৩জুন) উপজেলার গজলালিয়া গ্রামে এই শিক্ষক দম্পতির বাড়িতে গিয়েও তাদের পাওয়া যায়নি। বাড়ির সব কয়টি ঘরই তালবদ্ধ পাওয়া গেছে। এই পরিবারের সকল সদস্য হঠাৎ করে একই সঙ্গে নিখোঁজ থাকার কথা জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকার মহাজনী সুদ ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে শিক্ষক খোকন চন্দ্র রায় ও তার স্ত্রী শিখা রানী রায় তাদের কর্মস্থল ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারে বলে সহকর্মী ও স্বজনরা ধারনা করছেন।
এলাকার বিভিন্ন মানুষ ও সহকর্মীদের সাথে কথা বলে জানাগেছে,এই শিক্ষক দম্পতি কোটালীপাড়া উপজেলার ঘাঘর বাজারের কাপড় ও মুদি ব্যবসায়ী পূর্ণ চন্দ্র সাহা, ধারাবাশাইল বাজারের মুদি ব্যবসায়ী পুলীন হালদার, কাপড় ব্যবসায়ী লিটন রায়, ভেন্নাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কেশব গাইন, পিঞ্জুরী গ্রামের বাদলের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে ছিলেন। এই মহাজনী সুদের টাকার দিতে প্রতিমাসে খোকন চন্দ্র রায় ও তার স্ত্রী শিখা রানী রায়ের হিমশিম খেতে হতো। এই দম্পতির ৪টি কন্যা ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করার কারণে প্রতি মাসেই এদের ধারদেনা করে চলতে হতো। সংশার চালাতে মানুষের কাছ থেকে সুদে টাকা আনা লাগতো।
খোকন চন্দ্র রায়ের সহকর্মী ভূদেব চন্দ্র বালা বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খোকন চন্দ্র রায় ও তার স্ত্রী সহকারী শিক্ষক শিখা রানী রায় ৩দিনের ছুটি নিয়ে ছিলেন। গত ১৪জুন তাদের ছুটি শেষ হয়েছে। কিন্তু তাদের ছুটি শেষ হওয়ার পরেও তারা তাদের কর্মস্থলে যোগদান করেনি। বিষয়টি আমরা উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার ইউছুব আলী খান স্যারকে জানিয়েছি।
বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক অমূল্য রতন হালদার বলেন, আমাদের প্রধান শিক্ষক খোকন চন্দ্র রায় অনেক ব্যক্তির কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা এনেছিলেন। যাদের কাছ থেকে টাকা এনেছিলেন তারা প্রায়ই টাকার জন্য প্রধান শিক্ষক খোকন চন্দ্র রায়কে চাপ দিতেন। এই চাপের কারণে তিনি পালিয়ে থাকতে পারেন।
টাকা পাওয়ার কথা স্বীকার করে ঘাঘর বাজারের কাপড় ও মুদি ব্যবসায়ী পূর্ণ চন্দ্র সাহা বলেন, শিক্ষক খোকন চন্দ্র রায়ের কাছে আমি টাকা পাই। তবে তাকে টাকার জন্য কখনো চাপ দেয়নি। কত টাকা পাওনা আছে এমন প্রশ্নে করা হলে তিনি টাকার পরিমান বলেতে রাজী হননি।
খোকন চন্দ্র রায়ের কাকাতো ভাই পূর্বাপাড়া গ্রামের স্কুল শিক্ষক সোমনাথ রায় বলেন, খোকন চন্দ্র রায় আমাদের বংশীয় কাকা মৃত যোগেন্দ্রনাথ রায়ের একমাত্র পুত্র। সে প্রায় ৩০বছর আগে বাড়ির জায়গা জমি বিক্রি করে কান্দি ইউনিয়নের গজালিয়া গ্রামে বাড়ি করেছে। তার সাথে আমাদের তেমন যোগাযোগ নেই। তার নিখোঁজ থাকার কথাও আমাদের জানা নেই। তবে কি কারনে তিনি পরিবার নিয়ে গাঢাকা দিয়েছেন বলতে পারবো না।
কোটালীপাড়া উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার ইউছুব আলী খান বলেন, শিক্ষক খোকন চন্দ্র রায় ও তার স্ত্রী শিখা রানী রায় বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার কথাটি ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ভূদেব চন্দ্র বালা মৌখিক ভাবে আমাকে জানিয়েছেন। আমি বিষয়টি জানার পরে আমার উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আমজাদ হোসেন বলেন, শিক্ষক খোকন চন্দ্র রায় ও তার স্ত্রী শিখা রানী রায় কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার কারণে তাদের বেতন সাময়িক ভাবে স্থগিত করা হয়েছে। এভাবে ৬০দিন অনুপস্থিত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কোটালীপাড়া থানার ওসি মোঃ জিল্লুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি জেনে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply