কালের খবরঃ
দীর্ঘ ৫৫ বছর বন্ধ থাকার পর গোপালগঞ্জে মধুমতি বিলরুট ক্যানালের সাথে কংশুরে খালের সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। পাকিস্তান আমলে মধুমতি বিলবুট চ্যানেলের (কাটা মধুমতিনদী) ভাঙ্গন দেখা দেওয়ায় এই খালের মুখটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার করপাড়া, দূর্গাপুর, কাজুলিয়া ও কাঠি ইউনিয়নের অন্ততঃ ৩৫ টি গ্রামের কৃষক চাষাবাদে ক্ষতির সম্মুখীন হন।
এসব গ্রামের কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে প্রশাসন খালটি নদীর সাথে সংযোগের উদ্যোগ গ্রহন করেন। পরে ২০০ মিটার দীর্ঘ খালটি খনন করা হয়।
শুক্রবার (১৩ জানুয়ারী) দুপুরে সংযোগ স্থাপনের শুভ উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম। পরে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নাজমুন্নাহার, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফয়জুর রহমান,সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহসিন উদ্দিন, সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো. মামুন খান, উলপুর ইউনিয়নের কামরুল হাসান বাবুলসহ স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় করপাড়া ইউনিয়নের কৃষক মো.ফুল মিয়া খান(৪৫)বলেন,পানির অভাবে আমাদের চাষাবাদ করতে কষ্ট হতো। অনেক জমি অনাবাদি থাকতো। এখান নদীর সাথে খালে সংযোগ হওয়ায় আমাদের অনেক উপকার হবে।
একই এলাকার কৃষক মো. হাফিজুর মোল্লা(৫৫) বলেন, জমির পানি নদীতে নামার ব্যবস্থা না থাকায় এসব এলাকার কৃষি জমিতে স্থায়ী জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এই খালটির সাথে ১২টি খালের সংযোগ রয়েছে। নদীর সাথে খালটির পুনঃসংযোগ স্থাপন হওয়ায় এই সব ইউনিয়নে কৃষি উৎপাদন বাড়বে। এখন আর ভুগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভর করতে হবে না। তাই কৃষি উৎপাদনে খরচ কমবে।
একই এলাকার একরাম আলী খান (৬৫)বলেন, এখন থেকে খাল পাড়ের বাসিন্দারা খালের পানি দিয়ে দৈনন্দিন কাজ সারতে পারবে। চাষাবাদে ব্যবহার করতে পারবে কংশুর খালসহ এই খালের সাথে সংযোগ অন্যান্য খালের পানি। এতে মানুষ উপকৃত হবে। করপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নোয়াব আলী ফকির বলেন, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবী ছিলো এই খালটির বন্ধমুখ নদীর সাথে সংযোগ স্থাপন। দীর্ঘ বছর পর এলাকাবাসীর দাবী পুরণ হলো। এতে এলাকাবাসী খুশি। এলাকার কৃষকদের মধ্যে আনন্দ বয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় করপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা ও গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা এস.এম নজরুল ইসলাম বলেন, এই খালটির বন্ধমুখ নদীর নদীর সাথে সংযোগ স্থাপন হওয়ায় করপাড়া, দুর্গাপুর, কাজুলিয়া ও কাঠি ইউনিয়নের অন্ততঃ ৩৫টি গ্রামের কয়েক হাজার কৃষকদের জন্য আশির্বাদ হয়েছে।
খালটির মুখ বন্ধ থাকায় এসব ইউনিয়নের অনেক জমিতে স্থায়ী জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। আর শুষ্ক মৌসুমে বোরো আবাদে সেচ দিতে পানির সংকটে পড়তে হতো এলাকার কৃষকদের। এখন আর পানির সংকট হবে না। এখন সকল জমি চাষের আওত্তায় আসবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফয়জুর রহমান বলেন, এই খালটির মুখ দীর্ঘ ৫৫ বছর বন্ধ ছিলো। আজ খালটি নদীর সাথে সংযোগ স্থাপন করা হলো। এতে খালটিতে জোয়ার ভাটা সৃষ্টি হবে। শুষ্ক মৌসুমে সেচ কাজে এই খালে পানি ব্যবহৃত হবে। আগে ভুগর্ভস্থ পানির উপর চাপ কমবে। হাজার হাজার মেট্রিক টন অতিরিক্ত ফসল উৎপাদিত হবে।
জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম বলেন, নদীর সাথে খালটির পুনঃসংযোগ স্থাপন হওয়ায় এলাকায় চাষাবাদের উন্নয়ন ঘটবে। অনাবাদি জমিতে আবাদ হবে। এতে বাড়তি ফসল উৎপাদিত হবে। দেশ খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বনির্ভর হবে।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply