কালের খবরঃ
গোপালগঞ্জের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি বর্তমানে নানা সমস্যায় ভুগছে, যা রোগীদের চিকিৎসা সেবাকে ব্যাপকভাবে ব্যাহত করছে। চিকিৎসক ও কর্মচারী সংকট, যন্ত্রপাতির অচলাবস্থা এবং অব্যবস্থাপনায় হাসপাতালটির কার্যক্রমে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এসব সমস্যার কথা অকপটে স্বীকার করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সালে ১০০ শয্যা হাসপাতাল হিসেবে যাত্রা শুরু করা গোপালগঞ্জ হাসপাতালটি ধাপে ধাপে ২৫০ শয্যায় উন্নীত হয় এবং বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামও সংযোজন করা হয়। ২০১৩ সালে সিটি স্ক্যান মেশিন এবং ২০১৫ সালে এমআরআই মেশিন স্থাপন করা হয়েছিল। তবে এসব অত্যাধুনিক মেশিন বর্তমানে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত সিটি স্ক্যান মেশিন চালু ছিল। আর এমআরআই মেশিন ২০১৯ সালের মার্চ থেকে সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়ে আছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ জীবিতেষ বিশ্বাস বলেন, চিকিৎসক সংকট গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন বিভাগের ৬৬ জন ডাক্তারের বিপরীতে ৩৭ জন চিকিৎসক রয়েছেন। প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক চিকিৎসক দিয়ে সেবা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এর মধ্যে আবার কার্ডিওলোজি, মেডিসিন এবং ডেন্টাল বিভাগের চিকিৎসকদের অভাবে এসব বিভাগের সেবা বন্ধ রয়েছে। রোগী ফিরে যায়। যদিও একাধিকবার কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠানো হয়েছে, তবে তা এখনও সমাধান হয়নি। ফলে রোগীরা চিকিৎসা নিতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়ছেন এবং দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
এছাড়া, কর্মচারী সংকটও ব্যাপক। হাসপাতালের অস্থায়ী (আউটসোর্সিং) কর্মীদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তারা বিনা বেতনে কাজ করছেন। এর ফলে, হাসপাতালের ওয়াশরুম এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়েছে। রোগী এবং তাদের স্বজনরা নোংরা পরিবেশে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন, যা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে।
এ বিষয়ে এক্সরে টেকনিশিয়ান পরিমল বিশ্বাস জানান, সিটি স্ক্যান মেশিন বন্ধ থাকার কারণে অনেক দরিদ্র রোগী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সেবা প্রদানকারী সেবিকা মুক্তি বৈরাগী বলেন, হাসপাতালের পানির সংকট এবং বাথরুমের নোংরা পরিবেশের কারণে রোগী এবং তাদের স্বজনদের মধ্যে মনমালিন্য হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এসব সমস্যা দ্রুত সমাধান করা উচিত।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ জীবিতেষ বিশ্বাস প্রতিবন্ধকতার কথা স্বীকার করে আরো বলেন, চিকিৎসকসহ লোকবল সংকট এবং যন্ত্রপাতির অচলাবস্থা হাসপাতালের কার্যক্রম ব্যাহত করছে। বিশেষ করে মেডিসিন, সার্জারি এবং ডেন্টাল বিভাগে চিকিৎসক না থাকায় রোগীদের সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, এমআরআই এবং সিটি স্ক্যান মেশিনের রিপেয়ার জন্য প্রতি মাসে চিঠি পাঠানো হলেও তা এখনও সমাধান হয়নি।
গোপালগঞ্জ হাসপাতালের রোগী এবং তাদের স্বজনরা আশা প্রকাশ করেছেন যে, কর্তৃপক্ষ দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান করবে। তারা মনে করেন, চিকিৎসক সংকট, যন্ত্রপাতির অচলাবস্থা এবং অন্যান্য সমস্যাগুলোর সমাধান হলে গোপালগঞ্জ হাসপাতাল আবার তার পূর্ণ সক্ষমতায় রোগীদের উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে সক্ষম হবে।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION