কোটালীপাড়া প্রতিনিধিঃ
গোপালগঞ্জে ব্যতিক্রমী “গুরুজনে কর নতি” অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মা-বাবার পা-ধোয়ালো তিন শতাধিক শিক্ষার্থী। কোটালীপাড়া উপজেলার এস কে এম এইচ উচ্চ বিদ্যালয় এ ব্যাতিক্রমী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মা-বাবাসহ গুরুজনদের প্রতি শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধা বাড়ার পাশাপাশি আলোকিত জীবন গড়ে উঠবে বলে মনে করেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।
এস কে এম এইচ উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখাগেছে, স্কুল মাঠে চেয়ারে বসে আছে মা-বাবা আর গুরুজন। তার পাশেই পানি, ফুল, ধুপকাঠি আর মোবমাতি নিয়ে বসে আছে সন্তান। কিছুক্ষণ পরই এক সাথে মা-বাবা আর গুরুজনদের পা ধুয়ে মুছে দিয়ে মোববাতি আর আগরবাতি জ্বালিয়ে ফুল ছিটিয়ে আশির্বাদ নিলো সন্তানেরা। এমন ভক্তি দেখে মা-বাবার দু’চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো পানি। আর মা-বাবাকে জড়িয়ে আবেগ-আপ্লুত সন্তানও।
এ আয়োজনের মধ্যে দিয়ে মাতা-পিতা, শিক্ষক ও গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধাভক্তির প্রায়োগিক শিক্ষা গ্রহণ করতে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীরা গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধা, ভক্তি নিবেদনের শপথ গ্রহণ করে। আর এমন ব্যতিক্রমি “গুরুজনে কর নতি” অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কোটালীপাড়া উপজেলার এস কে এম এইচ উচ্চ বিদ্যালয়।
গত মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারী)বিকেলে এস কে এম এইচ উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত “গুরুজনে কর নতি” অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, কোটালীপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ সিদ্দিক নুর আলম। এস কে এম এইচ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমৃত কুমার বাড়ৈর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিদ্যানুরাগী খগেন্দ্রনাথ গাইন, ম্যানেজিং কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ বৈদ্য, ম্যানেজিং কমিটির প্রাক্তন সভাপতি যতীন্দ্রনাথ বল্লভ, প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক পঙ্কজ কুমার বৈদ্য, ম্যানেজিং কমিটির প্রাক্তন সভাপতি সুনিল চন্দ্র বিশ্বাস বক্তব্য রাখেন।
বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী কোয়েল বাইন বলেন, “গুরুজনে কর নতি” অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিদ্যালয় আমাদের গুরুজনদের শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ করে দিয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম জীবনে বড় হতে গেলে গুরুজনদের আর্শিবাদ ও দোয়া প্রয়োজন। তাদের আর্শিবাদ ও দোয়া ছাড়া কোন কিছুই করা সম্ভব নয়।
অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী গৌরি বল্লভ বলেন, এবারই প্রথম এমন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মা-বাবা ও শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারলাম। এখন মনে হচ্ছে আমি আমার মা-বাবা ও শিক্ষকদের কতটা ভালোবাসি ও শ্রদ্ধা করি।
অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী পূজা বাড়ৈ বলেন, শুধু আজ নয় প্রতিটি দিন মা-বাবা ও গুরুজনদের শ্রদ্ধা জানাতে চাই। এমন আয়োজন করায় আমরা খুশী। আগামীতেও এমন আয়োজন করার দাবী জানাই।
অভিভাবক দীলিপ কুমার বাইন বলেন, গুরুজনদের প্রতি সম্মান দেখাতে শিক্ষার্থীদের মাঝে নীতি-নৈতিকতা শিখাতে, গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধা গড়ে উঠবে। সেই সাথে এই ধরণের কর্মসূচীর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মনন ও মেধার উন্নতি হবে।
অপর অভিভাবক মল্লিকা গাইন বলেন, এমন আয়োজনে অংশ নিতে পারায় আমি খুশি। এতে করে শিক্ষার্থীরা মাদক, জঙ্গি তৎপরতা ও ইভটিজিং থেকে দূরে থাকবে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমৃত কুমার বাড়ৈ বলেন, শিক্ষার্থীদের নীতি-নৈতিকতা শেখাতে এমন আয়োজনের কথা চিন্তা করি। তারই ধারাবাহিকতায় “গুরুজনে কর নতি” অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শিক্ষার্থীদের মাঝে নীতি-নৈতিকতা গড়ে তুলতে আগামীতেও এমন আয়োজন অব্যাহত রাখা হবে।
কোটালীপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ সিদ্দিক নুর আলম বলেন, “গুরুজনে কর নতি” অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে প্রতিটি শিক্ষার্থী মানবিক গুনাবলি নিয়ে সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। এতে বৃদ্ধ বয়সে মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখবে না সন্তানরা। শিক্ষার্থীদের মানবিক হিসাবে গড়ে তুলতে উপজেলার প্রতিটি স্কুলে এমন আয়োজন করা হবে। #
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply