মুকসুদপুর প্রতিনিধিঃ
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মিহির কান্তি রায় মারা যাওয়ার পর তার স্ত্রীকে পরিষদের উত্তরাধীকার ঘোষনা করে বক্তব্য দিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য ও অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক খন্দকার মনজুরুল হক লাবলু।
এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় এ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সাধারন মানুষসহ এলাকায় চাঞ্চল্য সৃস্টি হয়েছে। চলছে আলোচনা-সমালোচনা ।
স্থানীয়দের সূত্রে জানাগেছে, গত রবিবার (১১ জুন) সকাল সাড়ে দশটায় গত সদ্য প্রয়াত (৪জুন ) চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মিহির কান্তি রায়ের বাড়িতে যান। সেখানে এক শোক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ শোকা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য ও অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক খন্দকার মনজুরুল হক লাভলু। এ সময় মুকসুদপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাবির মিয়া, বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সোহেল মোল্যা, ননীক্ষীর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মজিবর শেখ উপস্থিত ছিলেন।
ওই ভিডিওতে দেখা যায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য ও অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক খন্দকার মনজুরুল হক লাবলু বলেন, জলিরপাড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিহির কান্তি রায় আমার অত্যান্ত কাছের একজন মানুষ ছিলেন। তাই তার স্মৃতি ধরে রাখতে তার স্ত্রী জলিরপাড় ইউনিয়ন পরিষদের উত্তরাধীকার। আমি যত দিন বেঁচে আছি এই পরিবারের সমস্ত দ্বায়িত্ব আমি দেখবো। মিহিরের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি। পরোপারে যেনো সে ভালো থাকে।
এছাড়া তিনি তার ফেসবুক ওয়ালে লেখেন, জলিরপাড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিহিরের আকস্মিক ও অকাল মৃত্যুর পর আমি তার পরিবারে দেখা করতে গেলে, আমি নিজেই শোকে কাতর ও আপ্লুত হই। এটা সহ্য করা কঠিন। আল্লাহ পাক মিহিরের পরিবারের সদস্যদের উপর রহমত দান করুন ও মিহিরের আত্মার শান্তি কামনা করি। আমি তার পরিবারের সাথে আছি এবং থাকবো ইনশাআল্লাহ।
এরপর এ ঘোষনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সাধারন মানুষের মধ্যে তীব্র আলোচনা ও সমালোচনা ঝড় শুরু হয়।
এ ব্যাপারে ননীক্ষীর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ রনি আহম্মেদ জানান, ইউনিয়ন পরিষদের কোন চেয়ারম্যান মারা গেলে তার স্ত্রীকে উত্তরাধীকার ঘোষনা করা যায় না। নির্বাচনের মাধ্যমে যিনি জয়ী হবেন তিনিই চেয়ারম্যান হয়ে পরিষদ চালাবেন। কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য মনজুরুল হক লাবলু যেটা ঘোষনা করেছেন সেটা আইন পরিপন্থী।
মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক হায়দার হোসেন বলেন, খন্দকার মনজুরুল হক লাবলু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য। কেউ মারা গেলে তার পরিবারকে সমবেদনা জানাতে পারেন। কিন্তু কাউকে ইউনিয়ন পরিষদের উত্তরাধিকারী ঘোষনা দিতে পারেন না। সেই সাথে একজন বিএনপি নেতার স্ত্রীকে প্রার্থী হবার ঘোষনাও দিতে পারেন না। এটা আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র বিরোধী কাজ। তিনি এর আগে ইউপি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে হারানোর জন্য কাজ করেছেন। আজ যেটা তিনি করেছেন সেটা সঠিক হয়নি।
মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সাইদুর রহমান টুটুল বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য হয়েও বিএনপির কোন নেতা মারা গেলে তিনি তার অনুভূতি জানাতে পারেন, শোক জানাতে পারেন। কিন্তু কোন সভায় যোগ দিয়ে বক্তব্য দিতে পারেন না। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগ বিব্রত হয়েছে। তিনি কি ভাবে বিএনপির নেতার স্ত্রীকে প্রার্থী হিসাবে ঘোষনা দিয়ে আসেন। এ বিষয়টি আমাদের নেত্রী আওয়ামীলীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে জানানো হবে। এরপর সিদ্ধান্ত তিনিই নিবেন।
মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রবিউল আলম সিকদার বলেন, বিএনপি নেতার স্ত্রীকে তিনি প্রার্থী হিসাবে ঘোষনা দিয়েছেন এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। তিনি এর আগেও আওয়ামী লীগের বিরোধীতা করেছেন।এলাকায় আসলে বিএনপি কর্মীদের সাথে নিয়ে চলেন। তিনি নাকি আগামী সংসদ নির্বাচেন প্রার্থী হবেন। তিনি কি বিএনপি নেতা কর্মীদের সাথে নিয়ে নির্বাচন করবেন তা আমার বোধগম্য নয়। কারন জলিরপাড় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমাদের নেত্রী প্রার্থী দিবেন। তিনি এর বিরোধীতা করেছে। তিনি কিভাবে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য হন এটা আমার বুঝে আসে না। আমি নেত্রীর কাছে দাবী জানাই এমন নেতাদের যেন দল থেকে বহিস্কার করা হোক।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য ও অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক খন্দকার মনজুরুল হক লাবলু সাংবাদিকদের বলেন, মিহির কান্তি রায় আমার মুকসুদপুর এলাকার একজন হিন্দু কমিউনিটি লিডার। তিনি বিএনপি বা আওয়ামী লীগ করেন সেটি কোন বিষয় না। আমি যখন ছাত্র রাজনীতি করেছি তিনি তখন ছাত্ররাজনীতি করতেন। হিন্দুদের মধ্যে তার ব্যাপক গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে। যেহেতু আমি আগামীতে সংসদ নির্বাচন করবো তাই তার বাড়ীতে গিয়ে সমবেদনা জানিয়েছি।
এ ব্যাপারে মুকসুদপুর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আঃ সালাম খান বলেন, জলিরপাড় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিহির কান্তি রায় আমাদের আগের কমিটির সহ-সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তখন আমি ওই কমিটির সাধারন সম্পাদক ছিলাম। বর্তমান আহবায়ক কমিটিতে মিহির কুমার রায় যুগ্ম আহবায়ক হিসাবে পদ পেয়েছেন কিনা সেটা আমার জানা নেই।
এ ব্যাপারে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম বলেন, কোন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারমন মারা গেলে নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত ওই ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান পরিষদ চালাবেন। বাইরের কেউ পরিষদ চালাতে পারেন না। এখন আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানাবো। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনকে জানাবে। পরে নির্বাচন কমিশন ভোট গ্রহনের আয়োজন করবে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে ২৮ নভেম্বর জলিরপাড় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নীভা রানী মন্ডলকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এই মিহির কান্তি রায়। তিনি রাজনৈতিক জীবনে মুকসুদপুর উপজেলা বিএনপির সক্রীয় নেতা ছিলেন। তিনি গত ৪ জুন সকালে মারা যান।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION