টুঙ্গিপাড়া প্রতিনিধিঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য দরকার স্মার্ট জনগোষ্ঠি। শিশুকাল থেকেই যেন তারা সেটা শিখতে পারে, সেই ব্যবস্থাটা আমরা নিয়েছি এবং প্রাথমিক শিক্ষাক্রমে কম্পিউটার শিখন ও শিখানো কার্যক্রম চালু করেছি। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের দক্ষতা বিকাশের উদ্যোগও আমরা গ্রহন করেছি। অন্যদিকে শিশুদের সুরক্ষার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি।তিনি শুক্রবার (১৭ মার্চ) দুপুরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩ জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির দেয়া ভাষণে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শিশুদের উদ্দেশ্যে বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা গড়তে চাই, আগামী দিনের স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১ সালে গড়তে চাই। আজকের শিশুরাই তো হবে সেই আগামী দিনের স্মার্ট জনগোষ্ঠি যারা এই দেশটাকে গড়ে তুলবে।
প্রধানমন্ত্রী শিশুদের উদ্দেশ্যে আরো বলেন, শিশুদের খেলাধুলা, শরীরচর্চ্চা, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। ছেলে মেয়েরা খেলাধুলায় অংশ গ্রহন করলে শরীর ও মন ভাল থাকবে এবং সবাই একটা আত্ম বিশ্বাস নিয়ে গড়ে উঠবে সেটা আমি চাই। শিক্ষক ও অভিভাবকদের কথা মান্য করতে হবে। প্রতিটি শিশুকে এই নিয়ম মেনে চলতে হবে। শিশুদের মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন হতে হবে। প্রতিবন্ধি বা অক্ষমদের প্রতি সহানুভুতিশীল হতে হবে। অন্ধকে অন্ধ বলিও না আর পঙ্গুকে পঙ্গু বলিও না এটা তো ছোট বেলার শিক্ষা। কাজেই তাদের প্রতি সহানুভুতিশীল হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিশুদের ভালবাসতেন। শিশুদের জন্য তাঁর অত্যন্ত দরদ ছিলো। শিশুদের সাথে খেলা করতেও তিনি খুব পছন্দ করতেন। এই জন্য আমরা তাঁর জন্মদিনটাকে শিশু দিবস হিসেবেই ঘোষণা করেছি। শিশুরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। আর শিশু দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়টা অত্যন্ত চমৎকার হয়েছে। এই প্রতিপাদ্য বিষয়টা হলো “স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুদের চোখ সমৃদ্ধির স্বপ্নে রঙিন”।
জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে দেশ এগিয়ে যাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতাই বলেছেন মহৎ অর্জনের জন্য মহৎ ত্যাগ প্রয়োজন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তাঁর আদর্শ আছে। সেই আদর্শ নিয়েই বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাবো আগামী দিনের স্মার্ট বাংলাদেশ। উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশে কোন শিশুই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হবে না। কোন মানুষই ভূমিহীন, গৃহহীন থাকবে না। দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জিরিত হবে না। প্রতিটি মানুষের মৌলিক চাহিদাপূরণ করে এই দেশটাকে উন্নতভাবে গড়ে তুলবো।
জাতির পিতার শিশুকাল থেকে মানুষের প্রতি দরদ ছিলো উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা নিজের জীবনটা উৎস্বর্গ করেছিলেন মানুষের মুক্তির জন্য। তিনি যখন স্কুলে পড়তেন তখন থেকেই দরিদ্র কোন ছেলের বই নেই নিজের বই দিয়ে দিতেন। নিজের গায়ের কাপড় খুলে দরিদ্র মানুষকে বিলিয়ে দিতেন। এমন কি দুর্ভিক্ষের সময় নিজের গোলার ধান পর্যন্ত তিনি মানুষকে বিলিয়েছেন। বড় হয়ে তিনি এ দেশের মানুষ যারা একেবারে শোষিত বঞ্চিত ছিলো এক বেলা খাবার পেতো না, যাদের কোন পুষ্টি ছিলো না, রোগের চিকিৎসা পেতো না, ঘর-বাড়ী ছিলো না, সেই সব মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্যই তিনি সংগ্রাম করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই সরকারে এসেছে এদেশের শিশুদের কথা বিবেচনা করে ও লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ণ করেছে। শিশু নারী ও প্রতিবন্ধিদের সুরক্ষায় আইন প্রনয়ণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই ২৬হাজার ১৯৩টি রেজিস্টার ও কমিউনিটটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ করে দিয়েছি। আমরা শিশুদের জন্য বিনামূল্যে বই দিচ্ছি। শুধু তাই না প্রাথমিক শিক্ষার্থী যারা প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দিচ্ছি। সরাসরি মায়ের নামে সেই টাকা যাচ্ছে। আর সব মিলিয়ে প্রায় ২ কোটি ৩০ লক্ষ শিক্ষার্থী আমাদের কাছে বৃত্তি উপবৃত্তি আর গবেষণার জন্য অর্থ পাচ্ছে।
শিশু শিক্ষার্থী স্নেহা ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে শিশু প্রতিনিধি স্বপ্নীল বিশ্বাস, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এমপি বক্তব্য রাখেন।
এরআগে প্রধানমন্ত্রী সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান, অস্বচ্ছল মেধাবী শিশু শিক্ষার্থীদের মধ্যে আর্থিক অনুদান বিতরণ করেন। পরে তিনি শিশু শিল্পীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন এবং শিশু শিল্পীদের সাথে ফটোসেশন অংশ নেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী বই মেলার উদ্বোধন ও স্টল পরিদর্শন করেন।
এর আগে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ১০টা ৪২ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি ও পরে প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করেন, বেজে ওঠে বিগউলের সুর। পরে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের শহিদ সদস্যদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাত অংশ নেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি, সংসদ উপনেতা ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী এমপি, আমির হোসেন আমু এমপি, শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, শাজাহান খান এমপি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক এমপি, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপি, শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি,আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এমপি, বাহাউদ্দিন নাসিম এমপি, শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল এমপি, কেন্দ্রীয় সংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আযম এমপি, এস.এম কামাল হোসেনসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পরে রাষ্ট্রপতি পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষর করেন। এরপর রাষ্ট্রপতির সহধর্মিনী ও পরিবারের সদস্যরা ফুল দিয়ে বঙ্গবন্ধু প্রতি শ্রদ্ধা জানান। সব কর্মসূচি শেষ করে বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার উদ্দেশ্যে টুঙ্গিপাড়া ত্যাগ করেন
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply