
কালের খবরঃ
অসুস্থ মাকে দেখার আগেই সড়কে কেড়ে নিল ছেলের প্রাণ। স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে মাকে দেখতে আসার পথে বাড়ি থেকে মাত্রা ১৭ কোলোমিটার দুরে মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলেন ডাক্তার দম্পত্তি ও তাদের ছেলে। গোপালগঞ্জ শহরের উদয়ন রোডের বাসিন্দা গোপালগঞ্জ পৌর সভার সাবেক কমিশনার প্রফুল¬ কুমার সাহার ছেলে ঢাকা বারডেম হাসপাতালের ডাক্তার। বাবা মার ছয় ছেলের মধ্যে বাসুদেব ছিলেন তৃতীয়। মায়ের অসুস্থতার খবরে ঢাকা থেকে নিজের প্রাইভেটকার নিয়ে গোপালগঞ্জে আসছিলেন তিনি।পথিমধ্যে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ফুকরা দক্ষিণপাড়া এলাকায় বাস, মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কারের সংঘর্ষে প্রাণ হারান তিনি।এসময় তার স্ত্রী শিবানী সাহা, ছেলে স্বপ্নীল সাহা ও চালক আজিজ মিয়াও নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় মোট ৯জন নিহত ও ২৫ যাত্রী আহত হন। গত শনিবার ( ১৫ মে) এই ঘটনা ঘটে। খবর শুনে পরিবারের সদস্য, আত্মীয় স্বজন শোকে স্তব্ধ হয়ে কিংকর্তব্য বিমুড় হয়ে পড়েন। শুধু বাসুদেবের পরিবার নয় শোকে কাতর হয়েছেন গোপালগঞ্জ শহরের আপামর মানুষ।
আইনী কার্যক্রম শেষে নিহতদের লাশ যখন বাড়িতে আনা হয় তখন এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারন ঘটে। পরিবার পরিজন, আত্মীয় স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশী কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। পরে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে গোপালগঞ্জের মানিকদাহ পৌর শ্মাশানে নিহতদের মরদেহর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।

ছেলে হারিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে ডাক্তার বাসুদেবের বাবা প্রফুল্ল সাহা আহাজারি করে বলেন, আমার একটা সম্পদ শেষ হয়ে গেল। আমি বেঁচে থাকতে আমার ছেলে মারা গেলো। এই শোক আমি কিভাবে কাটাবো। শুধু আমার ছেলে নয় ভগবান আমার পুত্রবধু ও নাতিকেও নিয়ে গেলো। এর থেকে আমার মরণ হওয়া ভালো ছিল ।
নিহত বাসুর ছোট ভাই লেলিন সাহা বলেন, দাদা মাকে দেখার জন্য বাড়ি আসছিলেন। মাওয়া ফেরী পার হওয়ার সময় আমার সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনিফেরীতে বসে আমাকে বলেছেন আমার আর দেড় দুই ঘন্টা লাগবে। মাকে বলিস আমি কাছাকাছি চলে এসেছি। আর বেশী সময় লাগবে না। কিন্তু ঘন্টা খানেক পরে পুলিশের ফোন আসলো সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে। প্রাইভেট কারের সকল যাত্রী মারা গেছেন।আমরা মুহুর্তের মধ্যে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে দেখি রক্তমাখা নিথর দেহে আমার দাদা বৌদি ও ভতিজা রাস্তায় শুয়ে আছে। দাদা মাকেও দেখতে পারলোনা, আর মাও দাদাকে দেখতে পারলোনা। এই করুন দৃশ্য আমরা কখনও ভাবতে পারিনাই। ছোটবোন রাখী সাহা থাকেন ঢাকায়। শুক্রবার সকালে তিনি দাদার (বাসু) সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছে। দাদাকে বাই দিয়ে (বিদায় নিয়ে) গোপালগঞ্জে মাকে দেখতে আসিন তিনি।শনিবার সকাল ১০টার মধ্যে দাদার আসার কথা ছিলো গোপালগঞ্জে। দাদা ঠিকই আসলো কিন্তু লাশ হয়ে। তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশের সড়ক নিরাপদ নয়। চালকরা বেপরোয়া গাড়ী চালায়। প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। তাই সড়ক আইন যথাযথ ভাবে পালনে সরকারকে এগিয়ে আসার আহবান জানান। তা না হলে আমাদের মতো অন্য পরিবারের সদস্যরা এভাবে সড়কে হারিয়ে যাবে।

মেয়ে বাসুদেব সাহার মেয়ে শর্ম্মি সাহা মা, বাবা ও ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে ঢাকা থেকে বাড়ি আসেন। বাড়ি এসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং আহাজারি করে বলেন, আজ আমি একা হয়ে গেলাম। আমিও মারা গেলে ভালো হতো। এখন আমি কি নিয়ে বাঁচবো । কিভাবে চলবে আমার বাকীটা জীবন। ভগবান এর থেকে আমায় মৃত্যু দেও।
শহরের মডেল স্কুল রোড়ের বাসিন্দা প্রতিবেশী মিটুল খান, শিশু রায়, নাজিমুল আলম নাজিম, বিশ্বজিৎ সাহা বলেন,বাসুদেব সাহা শুধু পরিবারের সম্পদ নয়। তিনি আমাদের গোপালগঞ্জ তথা দেশের সম্পদ। তার কাছে গিয়ে সেবা পাননি এমন মানুষ কম আছে। তিনি একজন বিনয়ী মানুষ। শ্রেণী ভেদে সবাইকে সম্মান ও ভালো বাসতেন। তার মৃত্যুতে আমরা গোপালগঞ্জবাসী শোকাহত।
গোপালগঞ্জের শেখ হাসিনা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও প্রতিবেশী শাহানাজ রেজা এ্যানী বলেন, আজ আমরা দেশের একজন সম্পদকে হারালাম। প্রতিনিয়ত সড়কে এরকম সম্পদ হারাচ্ছে। তাই সকলকে সড়কে সাবধানে চলাচল করা উচিত এবং সরকারের প্রতি সড়ক আইন যথাযথ ভাবে পালনের আহবান জানান।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION