কালের খবরঃ
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গোপালগঞ্জে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া সহিংস ঘটনার বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, সরকার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সহিংস ঘটনার সাথে যারা জড়িত কেবল তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে, নিরীহ কাউকে হয়রানী করা হবে না।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে প্রেসব্রিফিং করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা,সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল করিম খানে একথা বলেন। এসময় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান উপস্থিত ছিলেন। গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ প্রেসব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়।
প্রেসব্রিফিংয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল করিম খান বলেন, গোপালগঞ্জের সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনায় একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। একজন বিচারপতিকে প্রধান করে গঠিত এই কমিটিতে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও থাকবেন। তারা ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য সুপারিশ দেবেন। মানুষের জীবনের চেয়ে বড় কিছু নেই। তাই এ ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা হবে।
তিনি আরও বলেন,আমরা নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আমাদের উদ্দেশ্য একটি সুন্দর, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর নির্বাচন আয়োজন করা। যেকোনো রাজনৈতিক দলের জন্যই সমান সুযোগ থাকবে। নির্বাচন প্রক্রিয়া যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সেটিই আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। সাংবাদিক, সুশীল সমাজ ও সরকারি কর্মকর্তাদের সহায়তায় আমরা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করব এবং নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করব।
সংঘর্ষের ঘটনায় সাধারণ মানুষকে হয়রানি না করতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন,যারা পুলিশের গাড়িতে আগুন দিয়েছে কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছে, তারা অবশ্যই আইনের আওতায় আসবে। তবে নিরপরাধ মানুষ যেন ভোগান্তির শিকার না হয়, তা আমরা নিশ্চিত করব।
এর আগে, আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে দুই উপদেষ্টা প্রথমে জেলা কারাগার, জুলাই স্মৃতি স্তম্ভ সংঘর্ষস্থল, এনসিপির সভামঞ্চ এবং ক্ষতিগ্রস্ত জেলা প্রশাসকের বাসবভন, এসপি অফিস পরিদর্শন করেন। এরপর জেলা ও পুলিশ প্রশাসন এবং গোপালগঞ্জে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তারা।
এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ, আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোতাহের হোসেন, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান, পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, জেলা কারাগারের জেলার তানিয়া জামান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম রকিবুল হাসানসহ জেলার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও স্থানীয় সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সংঘর্ষের পর গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। কারফিউ ও ১৪৪ ধারা তুলে নেয়ার পর জনজীবনে স্বস্তি ফিরছে। তবে গ্রেপ্তারের ভয়ে বহু মানুষ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে।
গত ১৬ জুলাই এনসিপির পদযাত্রা ও পথসভা ভন্ডুল করতে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। পরবর্তীতে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। দিনব্যাপী সংঘর্ষে ৪ যুবক নিহত এবং পুলিশ ও সাংবাদিকসহ শতাধিক মানুষ আহত হয়। পরে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসরাত আরেক জনের মৃত্যু হয়। এই নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাড়ায় ৫জনে। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪টি হত্যা মামলা সহ মোট ৮টি মামলা দায়ের করে পুলিশ। মামলাগুলোতে ৮ হাজার ৪০৪ জনকে আসামি করা হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত ৩১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার মধ্যে ২০০ জনকে বাইরের জেলাগুলোর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION