কালের খবরঃ
১৫ আগস্ট বাঙ্গালী জাতির বেদনা মিশ্রিত শোকের দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে বাঙ্গালী জাতি শতাব্দীর মহানায়ক স্বাধীন বংলাদেশের স্থপতি ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারিয়েছিল। তাই দিনটি জাতীয় শোক দিবস। সোমবার (১৫ আগস্ট) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদৎ বার্ষিকী। জাতীয় শোক দিবসকে কেন্দ্র করে তাঁর জন্মভূমি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শোকের আবহ সৃষ্টি হয়েছে। শোকার্ত মানুষ বুঁকে শোকের চিহ্ন কালো ব্যাচ ধারণ করেছেন। টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ, সড়ক, অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়ির আঙ্গিনায় সর্বত্র উড়ছে কালো পতাকা। শুধু টুঙ্গিপাড়া নয় জেলা ব্যাপী কালো কাপড় দিয়ে তেরী করা হয়েছে তোরণ। এছাড়া ব্যানার ফেস্টুনে মাধ্যমে শোকের আবহ ফুঁটিয়ে তোলা হয়েছে। জাতীয় শোক দিবসকে ঘিরে টুঙ্গিপাড়ার সর্বত্র বিরাজ করছে শোকবহ পরিবেশ।
এদিন দুপুর ১২টায় বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে আসবেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জাতীয় শোক দিবসের টুঙ্গিপাড়ার কর্মসূচীর সূচনা করবেন। এসময় ৩ বাহিনীর একটি চৌকস দল তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করবেন। বিউগলে বেজে উঠবে বেদনার করুন মূর্ছণা। বেদীর পাশে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মাতা শেখ ফলিতুন্নেছা মুজিব সহ ৭৫ এর ১৫ আগস্টের শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া মোনাজাত করবেন।
রাষ্ট্রীয় কর্মসূচী শেষে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ, সহযোগি সংগঠন, জেলা আওয়ামী লীগ , টুঙ্গিপাড়া, কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শ্রমজিবি, পেশাজিবি সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধের বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।
এরপর টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে মিলাদ মাহফিল। এতে বঙ্গবন্ধু সহ ৭৫ এর ১৫ আগস্টের শহীদ, মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হবে। এ সময় দেশ ও জাতির কল্যাণ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ূ ও সাফল্য কামনায় প্রার্থণা করা হবে।জাতীয় শোক দিবসের রাষ্ট্রীয় এ কর্মসূচীতে মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, এমপি, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, আইন শৃংখলা বাহিনীর প্রধান সহ রাষ্ট্রের পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা অংশ নেবেন। এছাড়া কেন্দ্রীয়, স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ বাবুল শেখ বলেন, জাতীয় শোক দিবস আমাদের কাছে শ্রাবণের অশ্রুধারার দিন। দিনটি বড়ই বেদনার। এদিন আমরা আমাদের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হারিয়ে ছিলাম। শোকের দিনে তাঁর স্মৃতির প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা জানাই । বঙ্গবন্ধু সহ ৭৫ এর ১৫ আগস্টের শহীদদের আত্মার শান্তি কামনায় আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানাব।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুল বাশার খায়ের বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদৎ বার্ষিকী উপলক্ষ্যে টুঙ্গিপাড়ার সব মসজিদ, মন্দির ও গীর্জায় বিশেষ প্রর্থণার আয়োজন করা হয়েছে। মাদ্রাসা, এতিমখানায় খাবার বিতরণ করা হবে। এছাড়া ১টি পৌরসভা ও ৫টি ইউনিয়নের ৫৪টি ওয়ার্ডে আলোচনাসভা, মিলাদ, দোয়া মাহফিল এবং দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হবে।
গত ১১ আগস্ট থেকে টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে দর্শণার্থী প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়েছে। জাতীয় শোক দিবসের রাষ্ট্রীয় কর্মসূচীকে সমানে রেখে টুঙ্গিপাড়ার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সেখানে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সার্বক্ষনিক কাজ করছেন।
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা শোক দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টুঙ্গিপাড়া সফরের বিষিয়টি নিশ্চিত করে বলেন, জাতীয় শোক দিবসের সকল কর্মসূচী সফল করতে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা প্রশাসন, গণপূর্ত, এলজিইডি, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সহ অন্যান্য দপ্তর প্রয়োজনী সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। রাষ্ট্রীয় এই কর্মসূচী সফল করতে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
উল্লেখ্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামের সম্ভ্রান্ত শেখ পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান। মাতা শেখ সায়েরা খাতুন। পিতা মাতা তাকে আদর করে খোঁকা বলে ডাকতেন। ছোটবেলা থেকেই তাঁর মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ ও নেতৃত্বের গুনাবলী প্রকাশ পায়। দৃঢ়চেতা ও অসীম সহসী খোঁকা ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন সবার প্রিয় মুজিব ভাই। ১৯৬৯ এর গন আন্দোলণের চূড়ান্ত বিজয়ের পর ছাত্র জনতা তাঁকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করেন। তিনি দীর্ঘ লড়াই, সংগ্রাম ও নেত্রীত্ব দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেন। হয়ে ওঠেন বাঙ্গালী জাতির পিতা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দেশি-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদে চক্রান্তে বিপথগামী সেনা সদস্যরা বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করে। ৭৫ এর ১৬ আগস্ট মৃত্যুহীন নিথর দেহ নিয়ে বঙ্গবন্ধু টুঙ্গিপাড়ার প্রিয় মাটিতে ফিরে আসেন। পিতা-মাতার কবরের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়। বঙ্গবন্ধুর কবরকে ঘিরে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স গড়ে উঠেছে। বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ টুঙ্গিপাড়া গ্রামকে নবআলোকে উদ্ভাসিত করেছে। এটি এখন বাঙ্গালী জাতির তীর্থ ভূমিতে পরিনত হয়েছে। ছুটির দিনে এখানে প্রতিদিন অন্তত ১০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। এছাড়া প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ এখানে এসে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তাঁর জন্য কাঁদেন ও আত্মার শান্তি কামনায় বিশেষ প্রার্থণা করেন।
Design & Developed By: JM IT SOLUTION
Leave a Reply