মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ০৩:৩৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
প্রেমের টানে সুদুর চীন থেকে গোপালগঞ্জে ছুটে এসেছেন এক চীনা যুবক, বিয়ের মাধ্যমে সম্পন্ন হলো সফল প্রেমের গোপালগঞ্জে চায়নাদুয়ারী ও কারেন্টজাল বিক্রির অপরাধে দুই ব্যবসায়ীকে কারাদন্ড ও ৪ব্যবসায়ীকে ১লক্ষ ৫হাজার টাকা অর্থদন্ড ভারতের অন্যায় আবদারের কাছে আমরা মাথানত করবো না – ড. আসাদুজ্জামান রিপন বাদ্যযন্ত্র মনতুরা বানিয়ে সঙ্গীতাঙ্গনে সাড়া ফেলেছেন শিল্পী অজিৎ হালদার কাশিয়ানীতে যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে ৬ শিশুসহ আহত-২০ কাশিয়ানীতে ব্যবসায়ীর বাড়িতে দূর্ধর্ষ চুরি সেনাবাহিনীর মিথ্যে পরিচয়ে বিয়ে, শেষ পর্যন্ত ভুয়া প্রমাণিত হয়ে পুলিশ হেফাজতে সোমবার টুঙ্গিপাড়া উপজেলা বিএনপির সম্মেলন। বিএনপির সংবাদ সম্মেলন গোপালগঞ্জে ভ্যান চুরির ঘটনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষ! নারীসহ আহত অর্ধশতাধিক গোপালগঞ্জে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিল ভ্রাম্যমান আদালত

অলৌকিক ওড়াকান্দির হিজলগাছটি! কোটি মতুয়ার তীর্থস্থান

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৫, ১.০৩ পিএম
  • ২৭৭ Time View

প্রসূন মন্ডলঃ

বলছি, চিরহরিৎ হিজলের কথা। এ গাছ চেনেন না, বা এর নাম শোনেননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর।বাড়িরধারে, ধানক্ষেতের পাশে বা রাস্তার খাদে সৌন্দর্যেভরা এই হিজলগাছ এখন আর গ্রামাঞ্চলে তেমন একটা দেখা না গেলেও কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দি গ্রামের বিল পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা গাছটির গল্প অন্যরকম।

মধুমতি বিধৌত গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার একটি গ্রামের নাম ওড়াকান্দি। এই গ্রামের ঠিক পূর্ব দক্ষিণে ওড়াকান্দি বিল। ওড়াকান্দির হরিচাঁদ ঠাকুরের বাড়ির প্রায় ৩০০ মিটার পূর্বদিকে বর্তমানে রবিন বিশ্বাসের জমির উপর দন্ডায়মান এক বিশালাকৃতির হিজলগাছ। গাছটি এত পুরানো যে গাছের কান্ডের মধ্যে গুহার মত সুরঙ্গ তৈরী হয়েছে। এই গাছের নিচে বাল্যকালে বিশ্রাম নিতেন দলিত, নিপিড়িত মানুষের মুক্তির দূত, হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রাণপুরুষ ও কোটি কোটি মতুয়ার ভগবানখ্যাত মহাপুরুষ শ্রী হারিচাঁদ ঠাকুর।

জনশ্রুতি রয়েছে, এই গাছের ছায়ায় বাল্যকালে বিশ্রম নিতেন শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর। তিনি নিজেদের গরু মাঠে ছেড়ে দিয়ে এই হিজল গাছের ছায়াতলে সহচরদের নিয়ে গল্প করতেন ও বিশ্রাম নিতেন।পরবর্তিতে হরিচাঁদ ঠাকুর হিন্দু সম্প্রদায়ের সকল শ্রেণি পেশার মানুষের কাছে এক মুক্তিরদূত হিসেবে জাগ্রত হয়ে ওঠেন।সেই থেকে ভক্তকুল নিয়ে এই হিজল গাছের নিচে আধ্যাতিক কর্মকান্ড চালাতেন।এছাড়া সর্পগর্তে সোনারূপার টাকা ভর্তি ঘরা ( মাটির পাত্র) পাওয়া ও তা ফেরৎ দেয়ার গল্পও রয়েছে।পরবর্তিতে এই গাছটি মতুয়া ভক্তদের কাছে এক অলৌকিক বৃক্ষরাজী বা তীর্থ স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

স্থানীয় বাসিন্দা গোবিন্দ কির্ত্তনীয়া জানান, এই গাছের বয়স আনুমানিক আড়াই থেকে তিনশত বছর হবে।কারন হারিচাঁদ ঠাকুর জন্মগ্রহণ করেন ১৮১২সালের ১১ মার্চ। জন্মতিথি হিসাব করলে হরিচাঁদ ঠাকুরের বয়স ২০২৫ সালের ১১ মার্চ পর্যন্ত ২১৪ বছর। ঠাকুরের জন্মের আগেই গাছটি অনেক বড় ছিল।ঠাকুরের বয়স যখন ২৩/২৪ বছর তখন তিনি নিজেদের গরু নিয়ে মাঠে আসতেন।গরু ছেড়ে দিয়ে এই হিজল ছায়ায় বা জিরানতলায় বসতেন।এছাড়া তিনি ভক্তদের সাথে নিয়ে নির্জন পরিবেশে ঠাকুরের নামগুনোগান করতেন।সেই থেকে আমরা গাছটিকে একটি পূর্নস্থান হিসেবে জেনে আসছি।

বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলার বাসিন্দা বিজয় মন্ডল বলেন, হরিচাঁদ ঠাকুর এই গাছের নিচে বসে ভক্তদের নিয়ে নামগুনাগুন করতেন। ভক্ত সমাবেশ করতেন। এটা জানার পর আমি পরিবার নিয়ে দেখতে এসেছি।এসে দেখলাম গাছটি অনেক পুরানো। এতো বয়সী যে গাছের মধ্যে গুহা তৈরী হয়েছে।এই পবিত্র স্থানে আসতে পেরে নিজেকে ধন্য কনে করি।

হরিচাঁদ ঠাকারের ষষ্ঠ পুরুষ শ্রী সুব্রত ঠাকুর বলেন, আমরা ঠাকুরের উত্তরসূরী।মা-বাবা, দাকুরমা-ঠাকুরদার কাছে শুনেছি শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর লেখা পড়া শিখেননি। তখন এলাকায় তেমন একটা স্কুল কলেজ ছিলোনা। গৃহস্থলী কাজ করতেন। গরু পালতেন।চাষাবাদ করে ফসল ফলাতেন ।গরু নিয়ে মাঠে যেতেন।বাড়ির চারপাশে বিল ছিল। সেখানে তিনি গরুকে খাওয়াতেন।বিলপাড়ে একটি হিজল গাছ ছিল। ওই জমিটি আমাদের ঠাকুর পরিবারের ছিল। পরবর্তিতে জমিটি রেকর্ডমূলে হস্তান্তর হয়ে যায়।এই গাছের ছায়ায় তিনি বিশ্রম নিতেন।এসব কথা হরিচাঁদ ঠাকুরের জীবনী হরিলীলামৃত গ্রন্থে লিখেছেন ঠাকুরেরে এক পরমভক্ত শ্রী তারক চন্দ্র সরকার (গোষাই)।সেই থেকে আমরা যারা মতুয়ামতাদর্শের মানুষ আছি সবাই এই গাছটিকে একটি তীর্থ বা পূর্নস্থন হিসেবে দেখে থাকি।

বাংলাদেশ মতুয়া মহাসংঘের মহা-সংঘাদিপতি শ্রীমতি সীমাদেবী ঠাকুর বলেন,‍শিক্ষা বিস্তারের পাশাপাশি কর্মেরও প্রয়োজন আছে। এই কারনে তিনি চাষাবাদ করতেন।চাষাবাদ করতে গরু পালতেন।গরু চরানোর ফাঁকে হিজল গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিতেন।পরবর্তিতে ভক্তদের নিয়ে নির্জন স্থান হিসেবে হিজল গাছের নিচে বসে ঠাকুরের আধ্যাত্মিক কথা বলতেন।তারই এক ভক্ত বদন গোষাই।একদিন খুবই অসুস্থ অবস্থায় ঠাকুরের কাছে আসেন।অসুখের কথা বলায় লোক চক্ষুর অন্তরালে ঠাকুর বাড়িতে তাকে শুইয়ে দিয়ে পেটে পা স্পর্স করতেই সমস্ত অসুখ ভালো হয়ে যায়। পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় হিজল তলায়। এর কিছুক্ষন পরই হিজল গাছের গোড়ায় থাকা একটা গর্ত থেকে সাপ বের হয়ে চলে যায়। সাপটির মুখ লাল দেখে হরিচাঁদ ঠাকুর বদন গোষাইকে বলেন এই গর্তের নিচে ধনসম্পদ আছে।কোদাল এনে খনন কর। বদন গোষাই খনন করে একটা সোনা রূপা ভর্তি টাকার ঘরা( মাটির পাত্র) পায়।তখন বদন গোষাইকে বলে তুইতো অনেকদিন অসুস্থ ছিলি এই টাকা নিয়ে তোর গৃহকার্য চালা। তিনি আরো বলেন তোর হরিনাম শুনে তুষ্ট হয়ে প্রহরি তোকে ধন দিয়ে গেছে।তখন ভক্ত বদন গোষাই বলে এই ধন আমি নিতে পারবোনা প্রভূ। আমি এই ধন নিতে রাজি না। তখন সাপটিকে পুনরায় গর্তে আসার আহবান করলে সাপটি গর্তে প্রবেশ করে।সেই থেকে হিজলতলা একটি তীর্থস্থানে পরিনত হয়।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Advertise

Ads

Address

Office : Sheikh Fazlul Haque Moni Stadium (2nd floor), Gopalganj-8100 Mobile: 01712235167, Email: kalerkhabor24.com@gmail.com
© All rights reserved 2022

Design & Developed By: JM IT SOLUTION